ইসলাম-বিদ্বেষী ছবির জেরে হিন্দুদের বহু বাড়ি-ঘর, মন্দির, দেব-দেবীর মূর্তি ভাংচুর

নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেসবুকে ইসলাম-বিদ্বেষী ছবি পোস্ট করার জের ধরে হিন্দুদের অন্তত ৫টি মন্দির ও বহু বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী নাসিরনগর উপজেলা সদরে গতকাল দুপুরে এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বিবিসিকে বলেন, দুর্বৃত্তরা অন্তত কুড়িটি ঘর ও ৫টি মন্দিরে ভাংচুর চালিয়েছে।

কিন্তু ঘটনাস্থলে সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সাংবাদিক মাসুক হৃদয় বলেছেন, তিনি ভাংচুরের শিকার প্রতিটি বাড়িঘরে গেছেন।

তার হিসেবে আটটি হিন্দু পাড়ায় অন্তত তিনশটি বসত ঘর ও দশটি মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

দুপুর বারোটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত এই ঘটনাপ্রবাহ চলেছে।

এসময় বহু হিন্দু অধিবাসীকে মারধর করারও ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার।

পুলিশ বলছে, এদিন নাসিরনগর সদর থেকে বারো কিলোমিটার দূরবর্তী হরিপুর গ্রামের রসরাজ দাস নামে এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি ফটো এডিটরের মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র কাবা ঘরের সংগে হিন্দুদের দেবতা শিবের একটি ছবি জুড়ে দেন।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামবাসী রসরাজ দাসকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিনই তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে তাকে আদালতে চালান করা হয়। কিন্তু ঘটনা সেখানে থেমে থাকেনি। পরদিন শনিবার পুরো নাসিরনগর এ ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত থাকে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে একটি সংগঠন রবিবার একটি বিক্ষোভ সমাবেশও আহ্বান করে।

সাংবাদিক মাসুক হৃদয় বলছিলেন, রবিবার যখন হিন্দু পাড়াগুলোতে ভাংচুর চলছিল, তখন আধা কিলোমিটার দূরে ওই সংগঠনটির বিক্ষোভ সমাবেশও চলছিল।

সংগঠনটির নেতাদের বরাত দিয়ে  হৃদয় বলেন, তারা এই হামলা ও ভাংচুরের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, “আমরা তো সমাবেশ করছিলাম, সবাই দেখেছে। আমরা ভাংচুর করব কিভাবে?”

পুলিশ বলছে, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত বলে এখনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ মনে করছে এ ঘটনার পেছনে বড় ধরণের উসকানি রয়েছে। পুলিশ উসকানি দাতারে খুঁজছে বলে জানান ওসি আব্দুল কাদের।

ঘটনার পর এলাকায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত বলেই জানা যাচ্ছে। এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই গত জানুয়ারি মাসে একজন মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হবার ঘটনার জের ধরে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ভাংচুর চালানো হয়।সেই ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হয় শহরে থাকা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতি বিজড়িত একটি সংগীত স্কুল। সূত্র:বিবিসি

LEAVE A REPLY