নাসিরনগরে আরও ৩৩ জনকে আটক, বিজিবি মোতায়েন

নাসিরনগরে হিন্দু মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত নাসিরনগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে ১১ জনকে আটক করায় সবমিলে এ ঘটনায় ৪৪ জনকে আটক করা হল। তারা নাসিরনগর থানায় আটক রয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ থেকে মোট ৫০ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রাতভর অভিযানে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আটকরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কি না সে বিষয়ে অবশ্য এখনও কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে হিন্দুদের নিরাপত্তা এবং বিশৃংখল পরিস্থিতি এড়াতে নাসিরনগরের বিভিন্নস্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম এবং ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সাখাওয়াত হোসেন।

ইসলাম অবমাননরার অভিযোগে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দু পরিবারের শতাধিক বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এরপর গতকাল শুক্রবার ভোরে পাঁচ হিন্দু পরিবারের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়।

এর আগে এ ঘটনায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের ঘনিষ্ঠ তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এরা হলেন, নাসিরনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, চাপরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী সুরুজ আলী ও হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া।

রোববারের ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাশেম দুপুরের দিকে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার পরনে শ্যাওলা রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা। মিছিলটি উপজেলা ঈদগাহ ও দত্তবাড়ি অতিক্রম করছে। এতে শত শত মানুষ উগ্র স্লোগান দিচ্ছে। অনেকের হাতেই লাঠিসোটা। এর মধ্য থেকে কয়েকজন উচ্ছৃংখল যুবক স্থানে স্থানে ভাংচুর করছে।

অভিযোগ রয়েছে- এ মিছিল থেকেই দত্ত বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়।

সেদিনের তাণ্ডবের পর মন্ত্রী ছায়েদুল হকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা আলোচনায় আসেন। ওই দিন সকালে উপজেলার চাপরতলা থেকে জঙ্গি মিছিল উপজেলা সদরে আসে।

এর নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী সুরুজ আলী। মিছিল থেকে দেবদেবী নিয়ে কটূক্তি ও অশ্লীল স্লোগান দেয়া হয়। মিছিলটি খেলার মাঠে হেফাজতপন্থীদের সমাবেশে যোগ দেয়া মাত্র মাঠটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সমাবেশে হাজী সুরুজ আলী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে সুরুজ আলী সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

একই দিন হেফাজতপন্থী ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে সমালোচনায় আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকার।

স্থানীয়রা জানান, হিন্দুদের ওপর তাণ্ডব চলার সময় সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ আবদুল আহাদ বিভিন্ন বাড়ি ও মন্দির রক্ষায় এগিয়ে গিয়েছিলেন।

LEAVE A REPLY