নাসিরনগরে আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ এমপি ছায়েদুল হকের সাথে জেলা আ’লীগ সভাপতি রবিউল আলম মোকতাদির চৌধুরীর বিরোধের বলি হয়েছেন আক্রান্ত হিন্দু ধর্মালম্বীরা । তাদের মধ্যকার বিরোধকে কেন্দ্র করেই হিন্দু বাড়িঘর মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা যাচ্ছে । একপক্ষ অন্যপক্ষকে ঘায়েল করতেই অসহায় রসরাজের ফেসবুক আইডি দিয়ে কাবা শরীফের ওপরে শিবের ছবি লাগিয়ে পোষ্ট করে আরেকপক্ষ ।
স্থানীয় সূত্রগুলি জানায়, ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে নাসিরনগরে আওয়ামীলীগের মনোনীত এমপি হন ছায়েদুল হক। এ নিয়ে তিনি চার বার এমপি এবং এলাকার প্রভাব বিবেচনা করেই শেখ হাসিনা তাকে পশুসম্পদ মন্ত্রী করেন। অন্যদিকে জেলা আ’লীগের সভাপতি রবিউল আলম মোকতাদির চৌধুরী (শেখ হাসিনার প্রাক্তন পিএস হয়েও) মন্ত্রী হতে পারেননি। সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে খুশি থাকতে হয়। অন্যদিকে ছায়েদুল হক আওয়ামীলীগের জেলা কমিটিতে উপদেষ্টা ছিলেন। জেলায় রাজনীতির প্রভাব বিস্তার নিয়ে ছায়েদুলের সাথে রবিউলের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল । গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে ছায়েদুল হক দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, এমন অযুহাত দেখিয়ে দু’মাস আগে জেলা আওয়ামীলীগ থেকে ছায়েদুলকে বহিস্কার করেন জেলা সভাপতি রবিউল। এরই প্রেক্ষিতে ২৬ সেপ্টেম্বর পরিবর্তন ডট কম সংবাদ হয় ‘রাজাকারপুত্র’কে মনোনয়ন দিয়ে পদ হারিয়েছেন মৎস্যমন্ত্রী। এতে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হন ছায়েদুল হক, দু’পক্ষে উত্তেজনাকর অবস্থার তৈরী হয়।
জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রবিউলের ছত্রছায়ায় ছায়েদুল হকের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী একটা গ্রুপ অনেকদিন ধরে কাজ করতে থাকে। কারন ছায়েদুল হকের বয়স হয়েছে, যেকোন দিন পরপারে চলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ছায়েদুল হক চাচ্ছেন, তার নিজের পুত্রকে রাজনৈতিক উত্তরসূরি বানাতে। অন্যদিকে জেলা সভাপতি ওবায়দুল মুকতাদির চাচ্ছেন এক মহিলা নেত্রীকে যিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এমবি কানিজ ।
এর আগে কোরবানির ঈদ, পুজা, ও জঙ্গি বিরোধী মিটিং ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে কানিজ একাধিকবার নাসিরনগরে ঢোকার চেষ্টা করে, কিন্তু মন্ত্রী ছায়েদুলের লোকদের বাধার মুখে সফল হয়নি। এ বছর ১১ সেপ্টেম্বর কানিজের সমর্থনে বানানো তোরণ পুড়িয়ে দেয় অপরগ্রুপ। এ ঘটনায় শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলাও হয়। এমনকি দু’পক্ষকে ঠান্ডা করতে প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারী করতে হয় । কানিজের উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় অবস্থান তৈরী ও প্রভাব বিস্তার করা, কিন্তু মন্ত্রী ছায়েদুল সেটা করতে দিবেন না। সম্প্রতি তার লোকজন দা-কুড়াল নিয়া জেলার সব নেতাদের তাড়িয়ে দেয়। মূলত তখন থেকেই জেলা সভাপতি ওবায়দুল মুকতাদির কোন বড় ঘটনা ঘটিয়ে ছায়েদুল হককে কোনঠাসা করার পরিকল্পনা করেন।
গত রবিবারে হিন্দুপাড়ায় হামলার ঘটনার সূত্রপাত নাসিরনগরের যে এলাকা থেকে, তার নাম হরিনবেড়। সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আঁখি হলেন রবিউলের লোক। পুরো উপজেলায় আঁখি হচ্ছে একমাত্র এমপি ছায়েদুল বিরোধী চেয়ারম্যান। গত ২৮ অক্টোবর যে রসরাজের ফেসবুক আইডি থেকে কাবা শরীফের সাথে দেবী মূর্তির ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই রসরাজ হচ্ছে এই আঁখির কর্মী! ফটোশপ করা ছবি রসরাজের ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার ঘটনা, এবং সেটা দ্রুত প্রচারের সাথে যুক্ত ছিলেন চেয়ারম্যান আঁখি এবং তার লোকেরা। মূলত এটা রবিউল মোকতদিরের দীর্ঘদিনের প্ল্যান। ঘটনার পরে চেয়ারম্যান আঁখি প্রকাশ্য বক্তৃতায় বলেন, স্থানীয় মন্ত্রীর আশীর্বাদে যারা রাজনীতি করছে, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে! ঘটনাক্রমে মনে হচ্ছে, ছবি পোষ্ট করার ক্ষেত্রে রসরাজকে কেবল ব্যবহার করা হয়েছে, কেননা সে নিজে একজন জেলে, তেমন শিক্ষিতও না, ফটোশপ করে ছবি বানানো তার দ্বারা অসম্ভব!
নাসিরনগর সদরের হিন্দুদের উপর হামলার পুরা ঘটনা ঘটানো হয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের লোকদের দিয়ে, যারা আসলে ওলামা লীগের লোকজন। এদেরকে ভাড়া করছেন আওয়ামীলীগ জেলা সভাপতি ওবায়দুল মুক্তাদির।
হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনার উত্তেজনা যেভাবে দেশ ছাড়িয়ে দিল্লি পর্যন্ত ছড়িয়েছে, তাতে বিনা বিচারেই জবাই হয়ে যেতে পারেন পশু মন্ত্রী বৃদ্ধ ছায়েদুল। অনেকেই মনে করছেন, মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়ে আওয়ামীলীগ জেলা সভাপতি রবিউলের দীর্ঘ দিনের খায়েশ পূরণ হতে যাচ্ছে। নাসিরনগরের এমপি পশুসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মোটামুটি শেষ। এমনকি তার ছেলেকে নাসিরনগরের রাজনীতিতে আনার স্বপ্নেরও আপাত সমাধি ঘটেছে। খুলে যেতে পারে কানিজের ভাগ্য! মোট কথা, আওয়ামীলীগের দুই পক্ষের কূট-রাজনীতির বলি হচ্ছে হিন্দুরা। তবে যদি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়, তাহলে বিপদে পড়তে পারেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লাট ভাই রবিউল আলম মোকতাদির চৌধুরী।