বিনা বিচারে ১৭ বছর কারাগারে থাকা মোহাম্মদ শিপনকে জামিন দিয়েছে উচ্চ আদালত । সেই সাথে ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করবারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ শিপন নামের এই ব্যক্তিটি গত ২০০০ সাল থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে কাটাচ্ছেন।
মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগ শিপনকে জামিন দিয়েছেন। কিন্তু শিপন জানেন না বাড়িতে তার বাবা-মা আছেন কি না। জেল থেকে বের হয়ে কি খাবেন, কোথায় থাকবেন তারও নিশ্চয়তা নেই। তবু মুক্ত জীবন পাওয়ার আনন্দাশ্রু শিপনের চোখে।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শিপনকে প্রশ্ন করেন, আপনাকে জামিন দিলে কোথায় যাবেন? শিপনের উত্তর দেন, পুরান ঢাকার বাড়ি যাব।
প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন শিপন কারাগার থেকে বের হয়ে যদি দেখেন থাকা খাওয়ার কোন উপায় নেই তাহলে কি হবে ? সে ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন আদালত। জামিন আদেশে আদালত বলেছেন, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শিপন আবেদন করলে তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন তিনি।
আদালত বলেছেন, ১৭ বছর ধরে বিনা বিচারে শিপনের কারাগারে থাকাটা রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক। রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করা।
প্রতিপক্ষের রোষানলে এক হাত হারিয়েছেন শিপন। তার বাম হাত কব্জি পর্যন্ত কাটা। শিপন আদালতকে জানান, এই মামলার বাদি পক্ষ তার হাতের কব্জি কেটে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিনা বিচারে ১৭ বছর কারাগারে আটক থাকা শিপনকে নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন গত ৩০ অক্টোবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে। আদালত শিপনকে ৮ নভেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। সেই অনুসারে তাকে মঙ্গলবার হাজির করা হয়।
আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, আদালত আদেশে বলেছেন, ৬০ দিনের মধ্যে এ মামলার বিচার শেষ করতে হবে। সেই পর্যন্ত শিপন জামিনে থাকবেন। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে মারামারিতে একজনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় জনৈক মো. জাবেদ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় দুই নম্বর আসামি মো. শিপন। এফআইআরে তার বাবার নাম ছিলো অজ্ঞাত। পরে অভিযোগপত্রে তার বাবার নাম লেখা হয় মো. রফিক, ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ৫৯, গোয়ালঘটা লেন, সূত্রাপুর। ২০০০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।