ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বিজ্ঞাপনের স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে ইউনিলিভারকে

ইউনিলিভারের কথিত রঙ ফর্সাকারী ক্রিম ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপনে দেয়া বক্তব্যের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ চেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে এসব তথ্য প্রমাণ জমা দিতে বলা হয়েছে ইউনিলিভারকে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মাহবুব কবীরের লিখিত অভিযোগের পর ২০ দিন আগে করা শুনানির তিন সপ্তাহ পর এই লিখিত আদেশ জারি করে অধিদপ্তর।

ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ক্রিমের ওই বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলিকে হারাতে পারেনি কেউ। এখন সারা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে মার্চ ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ‘৫ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ’ ক্যাম্পেইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় বলে দাবি করছে ইউনিলিভার। বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয় দুবাই, সিঙ্গাপুর আর জাপানের কিছু বিখ্যাত ক্রিমকে হারিয়ে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি প্রথম হয়েছে।

বিজ্ঞাপনে বলা হয়, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও জাপানের বিখ্যাত সব ক্রিমকে হারিয়ে ‘আনবিটাবল’ ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি। এই ক্রিম ত্বককে দ্বিগুণ ফর্সা করে বলেও দাবি করা হয় বিজ্ঞাপনে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক তার অভিযোগে বলছেন, বিজ্ঞাপনে প্রচারিত তথ্যগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার যথার্থতা যাচাই করা প্রয়োজন, যাতে জনগণ প্রতারিত হতে না পারে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে তার পণ্যের বিজ্ঞাপনে প্রচারিত তথ্যের সপক্ষে প্রমাণ দিতে বলা যেতে পারে। এই দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে সেটি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও মনে করেন এই সরকারি কর্মকর্তা।

গত ২০ অক্টোবর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে করা শুনানিতে মাহবুব কবীর এবং ইউনিলিভারের তিনজন আইনজীবী অংশ নেন। শুনানি গ্রহণ করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মজিদ। ওই শুনানিতে ইউনিলিভারকে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ এবং বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করে যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে সেটির সপক্ষে সকল কাগজপত্র ও প্রমাণ দিতে বলা হয়। তবে সেদিন লিখিত কোনো আদেশ জারি করা হয়নি। ওই শুনানির ১৯ দিনের মাথায় গত সোমবার লিখিত আদেশ জারি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, বিজ্ঞাপনে বলা হয়, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও জাপানের বিখ্যাত সব ক্রিমকে হারিয়ে ‘আনবিটাবল’ ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি। দুবাই, সিঙ্গাপুর ও জাপানের কোন কোন ক্রিমকে হারানো হয়েছে, ওই ক্রিমসমূহের নাম, কোথায় কোথায় সেই প্রতিযোগিতা হয়েছে, কারা বিচারক ছিলেন, প্রতিযোগিতায় হারানোর সার্টিফিকেটসমুহ,  কোন আন্তর্জাতিক মানের উপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, প্রতিযোগিতা কি ওপেন না ক্লোজ ডোর, সে সবের প্রমাণ এবং দলিল দাখিল করতে হবে।

আদেশে বলা হয়, বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ- এই বক্তব্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন পৃথিবীর আর কোন কোন দেশে দেখানো হয়, তার প্রমাণাদিও দাখিল করতে হবে। জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই আদেশ ইউনিলিভারের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল মজিদ ‍বিষয়টি দেখছেন। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে ইউনিলিভারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি ধরেন মোবারক নামে একজন কর্মী। তিনি এ বিষয়ে তাদের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা তানভীর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে জনাব মোবারক এই তানভীর ফারুকের ফোন নম্বর দিতে রাজি হননি।

এর আগে গত ২০ অক্টোবর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে শুনানির দিনও ইউনিলিভারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সেদিনও প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি। অধিদপ্তরে ইউনিলিভারের পক্ষে শুনানি করা আইনজীবীরাও সেদিন কোনো কথা বলেননি। এমনকি তারা নিজেদের পরিচয় দিতে চাননি গণমাধ্যমকর্মীদেরকে তাদের চাপের মুখে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে কক্ষ থেকে বের করে দিয়েই শুনানি হয় সেদিন। আর নজিরবিহীনভাবে বন্ধ রাখা হয় অধিদপ্তরের ক্যামেরাও।

LEAVE A REPLY