জঙ্গি হামলায় নিহত দুই বিচারক নিহত বিচারক সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়েকে স্মরণ করল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। নিহতদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই দুই বিচারকের আত্মত্যাগ বিচার বিভাগের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিচারক হিসাবে বিচারপ্রার্থী জনগণের সেবা করাই ছিলো তাদের জীবনের পরম ব্রত। তাদের আত্মত্যাগকে শুধু স্মরণ করলেই হবে না বিপদে আপদে তাদের পরিবারের পাশে থাকতে হবে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এই স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগের জন্য অনেকেরই অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু সেসব কিছু তুচ্ছ হয়ে যায় নিহত এই দুই বিচারকের আত্মত্যাগের কাছে। তিনি বলেন, আজকে আমরা যত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি তার অনেক কিছুর পেছনেই এই দু’জনের অবদান আছে। তাঁরা অকালে শাহাদত বরণ করার পরেই সরকার আমাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যানের ব্যবস্থা করে। বিচারিক কর্মজীবনেও এই দু’জন বিচারক ছিলেন অতি উচ্চ মূল্যবোধের অধিকারী। তাঁদের চরম আত্মত্যাগ বিচার বিভাগের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন বলেন, দুই বিচারক তাঁদের জীবন দিয়ে আমাদের ঋণী করে গেছেন। তাঁরা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।
হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ স্মৃতিচারণ করে বলেন, এমন হাসি—খুশি প্রাণোচ্ছল দু’টি প্রাণ এমন অকালেই ঝরে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি। তাঁরা প্রাণ দিয়ে বিচারকদের নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন। এজন্য তাদের মূল্যটা অনেক বেশি দিতে হয়েছে। তাদের আত্নত্যাগের ঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের উচিত তাদের পরিবারের সদস্যদের বিপদে-আপদে পাশে থাকা।
স্পেশাল অফিসার বেগম হোসনে আরা আকতার বলেন, তাঁদের মহান আত্মত্যাগকে শুধু স্মরণ করলেই হবে না বিপদে-আপদে তাঁদের পরিবারের পাশে থাকতে হবে। গত বছরের বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে তাঁদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়েছিল। সেটাই যেন শেষ না হয়। এবারও তাঁদের পরিবারকে স্মারক প্রদান করে সম্মান জানানো উচিত।
অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এসএম এরশাদুল আলম বলেন, জগন্নাথ পাঁড়ে এবং সোহেল আহমেদ ছিলেন আমার ব্যাচমেট। তবে জগন্নাথ পাঁড়ের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশি। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাশমেটও ছিল। এসএসসিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছিল, কিন্তু বিচারক হওয়ার ইচ্ছাটা এত বেশি প্রবল ছিল যে, পরে সায়েন্স বাদ দিয়ে আইন পড়তে আসে। বিচারক হয়ে মানুষের সেবা করাই ছিল তাঁর জীবনের লক্ষ্য। ঘাতকের বোমা তাকে অকালেই থামিয়ে দিয়েছে কিন্তু তাঁর আদর্শকে থামাতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি আদালতের দুই বিচারক সোহেল আহমেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়ে বোমা হামলায় মারা যান। এই দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান ওরফে সানি, খালেদ সাইফুল্লাহসহ সাত জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সরকার। আজ তাদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। সে সময় তাঁরা ছিলেন সিনিয়র সহকারী জজ। সভার শেষে শহীদ বিচারকদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।