আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি রসনেফটের একটি অধিগ্রহণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ২০ লাখ ডলার ঘুষ নিয়েছেন এমন সন্দেহে রাশিয়ার অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী আলেক্সেই উলুকালভকে আটক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীরা গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন।
সরকারি দুর্নীতি দমন সংস্থা ‘রুশ তদন্ত কমিটি’ (এসকে) বলেছে, গোয়েন্দা বাহিনী এফএসবি এক অভিযানে আলেক্সেই উলুকালভকে আটক করেছে। এসকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, গত মাসে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি বাশনেফটের বড় অংশ রসনেফটের অধিগ্রহণ অনুমোদন করার জন্য অর্থমন্ত্রী গত সোমবার ওই অর্থ নেন। কিন্তু ওই ঘুষের অর্থ তাঁকে কে দিয়েছেন, তা বিবৃতিতে বলা হয়নি। ওই চুক্তির মূল্য ৫২০ কোটি ডলার।
তদন্ত কমিটি বলছে, ঘুষ গ্রহণের ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে উলুকালভকে আটক করা হয়েছে, যার জন্য তাঁর ৮ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তাঁকে শিগগিরই অভিযুক্ত করা হবে বলেও তদন্ত কমিটি জানিয়েছে। কমিটির এক মুখপাত্র বলেন, ‘রসনেফটের প্রতিনিধিদের ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায় করা হয়েছে।…তিনি ঘুষ নিয়েছেন, তা হাতেনাতে ধরা পড়েছে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্র জানায়, উলুকালভ ও তাঁর সহযোগীর কথাবার্তার রেকর্ড থেকে তদন্তকারীরা অপরাধের ‘গুরুতর প্রমাণ’ পাওয়ার পর ‘স্টিং অপারেশনের’ অংশ হিসেবে তাঁকে আটক করা হয়।
অর্থমন্ত্রীর আটকের বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘এই গুরুতর অভিযোগের পক্ষে জোরালো প্রমাণ দরকার, যা কেবল আদালতই নির্ধারণ করতে পারেন।’
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, রাশিয়ার প্রধান দুর্নীতি দমন পর্ষদ ‘দ্য ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি’ (এসকে) বলেছে, উলিইউকায়েভ পেমেন্ট হিসাবে ২০ লাখ মার্কিন ডলার পেয়েছেন।
৬০ বছর বয়সী মন্ত্রী আলেক্সেই উলুকালভ দুর্নীতির সন্দেহে আটক হওয়া পুতিন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা। এ ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। রাশিয়ায় ১৯৯১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পর থেকে এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা আটক হওয়ার প্রথম ঘটনা। ২০০০ সালে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পুতিনের আমলে তাঁর মিত্ররা ফুলেফেঁপে উঠছেন বলেই অভিযোগ রয়েছে। আলেক্সেই উলুকালভ ২০১৩ সাল থেকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। পুতিনের আমলের সবচেয়ে দীর্ঘায়িত অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে টেনে তোলা ছিল তাঁর দায়িত্ব।
বিশ্ব জুড়ে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় রাশিয়ার অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। যার ফলে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু বাশনেফটের মত বড় কোম্পানি কার কাছে হস্তান্তর করা হবে সেটি নিয়ে জটিলতা কারণে অগাস্টে কোম্পানিটি বিক্রি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে অর্থের প্রয়োজনে গত মাসের শুরুতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হয়। তখন উলিইউকায়েভ রোসনেফটের দেওয়া পুরো অর্থ রাশিয়ার বাজেটে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১২ সালে একটি বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারির জেরে তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনাতোলি সারদিউকভকে বরখাস্ত করা হয়।