প্রিয় লিজ,
আমি চার সপ্তাহ আগে একটি নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক থাকতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে চাকরিটি নিয়ে আমি একটি বড় ভুল করে ফেলেছি। আমাকে যে জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে মাত্র একটি বড় উদ্যোগকে বাস্তব প্রকল্প বলে মনে হয়েছে।
এছাড়া আমার বস আর যেসব প্রকল্পের ধারণা সম্পর্কে কথা বলেছেন, তার সবগুলোই ভুয়া বলে মনে হচ্ছে।
এই প্রকল্পগুলো শুধু অনির্দিষ্টই নয় বরং আমি ল্যান্সকে দিয়ে সেসব সম্পরেক কোনো কথাও বলাতে পারছি না। তিনি আমাকে অগ্রাহ্য করছেন এবং কোনো প্রকল্পে তেমন কোনো কাজও দিচ্ছেন না।
ল্যান্স খুবই সুভাষী লোক। কিন্তু তিনি একজন ভয়ানক ম্যানেজার। পুরো অফিসের স্টাফরা তাকে ঘৃণা করেন।
ল্যান্স বলেছিলেন তিনি প্রতি সপ্তাহে একটি করে স্টাফ মিটিং করেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরও তেমন কোনো বৈঠক না দেখে আমি তাকে মিটিং করার কথা বলি। উত্তরে তিনি বললেন বছর শেষে করো আর মাত্র ছয় সপ্তাহ বাকী আছে!
আজ আমার প্রিয় সহকর্মী ন্যানেটের বিদায় উপলক্ষে একটি লাঞ্চ পার্টির আয়োজন করা হয়। ন্যানেট আমাকে বলেন, “এখান থেকে চাকরি ছেড়ে যেতে পারাটাই ২১০৬ সালে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হবে!”
এছাড়া আর যেসব চাকরির সুযোগের পেছনে আমি তাড়া করেছিলাম তার একটিও এখনো নেই। আমি যদি এই চাকরি ছেড়ে দেই তাহলে আমাকে পুরোপুরি নতুন করে চাকরির সন্ধান করতে হবে। আমি কী করতে পারি?
ধন্যবাদ,
স্নেহাল
প্রিয় স্নেহাল,
বিষয়টি বেশ হতাশাজনক। কিন্তু এমন সমস্যা আপনার একার না। ল্যান্স যে ভালো ম্যানেজার নন তা আপনার ইন্টারভিউর সময়ই নানা লক্ষণে ধরা পড়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি হয়তো তা খেয়াল করেন নি। অবশ্য আস্তে আস্তে সব মনে পড়বে। যাই হোক জীবন মানেই একটি শিক্ষামূলক যাত্রা।
আপনি তার চাকরির প্রস্তাবটি গ্রহণ করার পরপরই ল্যান্স আপনাকে দেওয়া উত্তেজনাকর প্রকল্প প্রতিশ্রুতিগুলো ভুলে গেছেন। আপনি যেমনটা বলেছেন ল্যান্স যদি সত্যিই ততটা বাজে ম্যানেজার হন তাহলে তিনি এবং তার দল কখনোই সফল হতে পারবে না।
কোনো চাকরি নেওয়াটা ভুল হয়েছে কিনা তা বুঝবেন এই ১০ লক্ষণে:
১. প্রথমদিনে আপনাকে যারা স্বাগত জানানোর কথা ছিল তারা যদি আপনার আগমনের জন্য প্রস্তুত না থাকেন এবং আপনার সঙ্গে কী করতে হবে সে ব্যাপারে বিভ্রান্ত হন।
২. ইন্টারভিউতে আপনাকে চাকরির যে চমকপ্রদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা ছিল কাল্পনিক। বাস্তব চাকরির বিবরণটি হয় আকারহীন আর নয়তো খুবই তুচ্ছ ও একঘেঁয়ে।
৩. আপনার সহকর্মীরা তাদের চাকরিকে ঘৃণা করেন এবং কে জানে বা না জানে তা নিয়ে কোনো পরোয়া করে না।
৪. আপনার বস তার অফিসে লুকিয়ে থাকেন। দলগত বৈঠক এড়িয়ে চলেন এবং কাউকে শাস্তি দেওয়া বা অপমান করার জন্যই শুধু তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
৫. আপনার নতুন সহকর্মীরা এক অপরের সঙ্গে মিলে মিশে থাকেন না। এবং জানেন না বা চান না কীভাবে সংঘাত নিয়ে কথা বলতে হবে।
৬. আপনার চারপাশের কেউই জানেননা কম্পানির অগ্রাধিকারমূলক পছন্দগুলো কী বা আপনার চাকরি এবং বড় লক্ষ্যটির মধ্যকার সম্পর্ক কী।
৭. আপনি উপলব্ধি করছেন, ইন্টারভিউয়ে আপনি যা কিছু শুনেছেন তার সবই মিথ্যা।
৮. আপনার বস, যিনি আপনার ইন্টারভিউর সময় এতো বেশি সংযুক্ত ছিলেন তিনিই এখন আপনার কী করতে হবে না হবে তা আপনি জানেন কিনা সে ব্যাপারে কোনো মাথা ঘামাচ্ছেন না। বা কীভাবে কী করতে হবে এবং আপনি দরকারি দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন কিনা তা নিয়েও চিন্তিত নন তিনি।
৯. কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি নেতিবাচক অনুভূতি লাভ করেছেন।
১০. সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি কয়েক সেকেন্ড শান্ত সুখ অনুভব করলেন। এরপর আপনার মনে হলো যে আপনাকে কাজে যেতে হবে।
আপনার এখন একটি পরিকল্পনা দরকার
আপনার যদি মনে হয় যে ল্যান্সের সঙ্গে থেকে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নতুন কিছু জমা হবে তাহলে আপনি তার সঙ্গে থাকতে পারেন। কিন্তু তেমন কোনো সম্ভাবনা না থাকলে নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করুন। আপনার যেহেতু এখন একটি চাকরি আছে সেহেতু আপনি আগের চেয়ে একটু সুবিধাজনক অবস্থানেই আছেন। আর একটি চাকরির পাশাপাশি গোপনে নতুন চাকরির সন্ধান করতে গিয়ে আপনি অনেক কিছুই শিখবেন। আপনি শিখবেন কী করে কর্মস্থলে গোলমাল থেকে দূরে থাকতে হয়।
তবে আপনার পথটি আপনাকে নিজে নিজেই খুঁজে নিতে হবে। সূতরাং ধ্যানমগ্নতার সঙ্গে বুঝার চেষ্টা করুন আপনার পথটি কী।
সূত্র: ফোবর্স