রিফাতুর রহমান :
জিনস্ বা ডেনিম কাপড়ে তৈরি পোশাক নামটা শুনলেই কেমন যেন একটা তারুণ্যের ছোয়া।ক্যাম্পাসের আড্ডা কিংবা পার্টিতে যেন জিনস্ প্যান্টের বিকল্প নেই।তবে অবাক হলেও সত্যি যে,জিনস্ প্যান্ট মূলত শ্রমিকদের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। ১৮০০ সালের শেষ দিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় আবিষ্কার হয় সোনার খনি। ‘গোল্ড মাইন’-এর লোভে আস্তে আস্তে ভিড়় বাড়তে থাকে ক্যালিফোর্নিয়ায়। একদিকে সোনার খনির ডলার অন্যদিকে লোকের ভিড়। লেভি স্ট্রস নামের এক ভদ্রলোক ১৮৫১ সালে জার্মানি থেকে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন শুকনো মালামাল সাপ্লাই দিতেন। এর মধ্যে কাপড়ও রয়েছে। ১৮৫৩ সালে তিনি সানফ্রান্সিসকোতে চলে যান, ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য। ১৮৭২ সালে লেভি স্ট্রসের সঙ্গে পরিচয় ঘটে জ্যাকব ডেভিসের সঙ্গে, যিনি পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। তিনি নিয়মিত লেভির কাছ থেকে কাপড় সংগ্রহ করতেন। লিভাই-এর দোকানে একধরনের নীল মোটা কাপড় পাওয়া যেত। জেকব ওই কাপড় দিয়ে সোনার খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য প্যান্ট বানাতেন। কিন্তু, প্যান্ট বানানোর সময় বারবারই জেকব দেখতেন শ্রমিকদের প্যান্টগুলো কোমরের কাছে পকেটে কাছটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তাই জেকব এমন একটা প্যান্টের নকশা তৈরি করলেন যাতে তা সহজে ছিঁড়বে না এবং পকেটের কাছে তামার ‘রিভেট’ পাত ছোট করে লাগানো থাকলে ওই জায়গাটা ফেঁসে যাবে না। ফলে, এই প্যান্ট বহুদিন টিকবে এবং শ্রমিকদের পকেটের সাশ্রয়ও হবে।তখন থেকেই জিনস্ প্যান্টের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে আশার কথা হল,বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের সাফল্য চোখে পড়ার মত।অল্প সময়ে ইউরোপের বাজারে ১ম স্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩য় স্থান দখল করে আছে। দেশে বর্তমানে ডেনিম কাপড় তৈরির কারখানা চালু আছে ২৮ টি।দেশের প্রথম সারির ডেনিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এনভয় টেক্সটাইল, হা-মীম ডেনিম, প্যাসিফিক ডেনিম লিমিটেড, মাহমুদ ডেনিমস লিমিটেড ইত্যাদি। গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ ১৮ কোটি পিস ডেনিম জিন্স রপ্তানি করে।চীন প্রতি বছর গড়ে ৩০ কোটি পিস ডেনিম জিন্স তৈরি এবং রপ্তানি করে। আশার কথা হল বাংলাদেশ ২০১৬ সালের প্রথম সাত মাসেই উৎপাদন করেছে ২০ কোটি পিস ডেনিম পন্য। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর শেষ হয়ে আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পে মোট উৎপাদন চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ইউরো স্টেটের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৬৫১ মিলিয়ন ইউরোর ডেনিম পণ্য আমদানি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৭৬ মিলিয়ন ইউরোর ডেনিম পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ডেনিম খাত থেকে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলার। সেটি আগামী চার বছরে ৭০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে সেই ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।
মৌসুমবিহীন এ পন্যের বিশ্ববাজারে চাহিদা দেখে এ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে উদ্যোক্তারা।তবে গ্যাস সংযোগ,জ্বালানির উচ্চমূল্য, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ অনান্য সমস্যাগুলো সরকার আন্তরিকভাবে সমাধানের পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশকে বিশ্বের এক নম্বর ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উপস্হাপন করা সম্ভব। লেখক: মো.রিফাতুর রহমান মিয়াজী (৬ষ্ঠ ব্যাচ,নিটার)