চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ।
আগামী ২৬ নভেম্বর ( শনিবার) সকাল ১১ টায় রাজশাহী জিরো-পয়েন্টে মানবন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদানের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে এ কর্মসূচী। পর্যায়ক্রমে ঢাকা সহ দেশের সকল বিভাগে কর্মসূচী পালন করা হবে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দাস এই কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। কর্মসূচীতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সহ সচেতন ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি জানান, পূর্বে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় ১৪ বছরে এস.এস.সি. পাস করা সম্ভব হত। তখন ডিগ্রি অনার্স কোর্স ছিল ৩ বছর এবং ডিগ্রি (পাস) কোর্স ছিল ২ বছর ফলে ১৮ কিংবা ১৯ বছর বয়সে স্নাতক পাস করা যেত। ফলশ্রুতিতে ১৮ কিংবা ১৯ বছর বয়সে বিসিএস সহ পি.এস.সির অন্যান্য চাকুরীগুলোতেও আবেদন করা যেত। বর্তমানে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সার্টিফিকেটে বয়স লিপিবদ্ধ থাকার ফলে ১৬ বছরের পূর্বে কোন ভাবেই এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া যায় না। ৩ বছরের অনার্স কোর্স ৪ বছর, ২ বছরের ডিগ্রি কোর্স ৩ বছর, ৩ বছরের ডিগ্রি কোর্সে সাথে ২ বছরের মাস্টার্স ছাড়া আবেদন করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, ৬ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তির বিধান নির্দিষ্ট হওয়ার ফলে ১৬ বছর ৩ মাস বয়সে এস.এস.সি. পরীক্ষা দিতে হয়। নন পি.এস.সি.’র ক্ষেত্রে যে প্রজ্ঞাপন তাতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ১৮ বছর। কিন্তু ১৮ বছর বয়সে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স কিভাবে শেষ হয়? ২ বছর মেয়াদী ডিগ্রিও এখন নেই। ১৬ বছর ২ মাসে এস.এস.সি., ১৮ বছর ৪ মাসে এইচ.এস.সি. ও ১৮ বছর ১০ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলে ১৯ বছর বয়সে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করলে ২৩ বছরের পূর্বে কখনো অনার্স শেষ করা সম্ভব না। তাহলে বিপিএসসি কোন যুক্তিতে চাকরির আবেদনের শুরুর বয়স ২১ থাকবে?
এই অকার্যকর আইন এখনো প্রয়োগ করে ছাত্র সমাজকে চরম ভাবে ঠকানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাই আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ১৬ বছর এখন নির্দিষ্ট (এস.এস.সি.’র ক্ষেত্রে)। নন পিএসসি’র ক্ষেত্রে ১৮ বছর এই চলমান আইনটি এখন অকার্যকর। ক্যাডারের ক্ষেত্রে ২১ বছরের আইনটিও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ২৩ বছর হচ্ছে চাকরিতে আবেদনে শুরুর বয়স, যদি তাই হয়, পূর্বের ন্যায় যদি আমাদের (১৮-৩০) অর্থাৎ ১২ বছর সময় দেওয়া হয় তাহলে সহজ হিসাব ২৩ এর সাথে আমাদের সুযোগ ১২ বছর যোগ করলে ২৩+১২=৩৫ বছর। এই অকার্যকর আইনগুলো সংশোধন করলেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩৫ বছর হয়ে যায়।
এ সময় সঞ্জয় কুমার দাস ক্ষোভ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সরকারী চাকরিতে ৫৫% কোটার মাধ্যমে নিয়োগ হয়। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন কোটা নাই। কোটা-ধারিরা চাকরিতেও কোটা পায়, আবার বয়সও তাদের শিথিলযোগ্য। উল্লেখ্য যে, মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি, জুডিশিয়াল ও ডাক্তার ৩২ ( ডাক্তারদের চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩২ করা হয়েছিল এই বলে যে সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে তাদের এক বছর বেশি পড়তে হয়, কিন্তু পরবর্তীতে সাধারণ ছাত্রদেরও অনার্সের কোর্স এক বছর বৃদ্ধি করে ৪ বছর করা হয়) বছর পর্যন্ত চাকরিতে আবেদন করতে পারে। নার্স-৩৬ এবং বিভাগীয় প্রার্থীরা ৪০ বছর পর্যন্ত চাকরিতে আবেদন করতে পারে।
উন্নত বিশ্বের প্রসঙ্গে তুলে তিনি বলেন, তাদের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা রেখাকে প্রাধান্য দেয়নি। অনেক দেশে অবসরের সীমা থাকলেও প্রবেশের কোন সীমা নেই। যেমন-ভারতের পশ্চিম বঙ্গে ৪০ অন্যান্য প্রদেশে ৩৮-৪০, শ্রীলংকাতে ৪৫, ইন্দোনেশিয়াতে ৪৫, ইতালিতে ৩৫, ফ্রান্স এ ৪০, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯, কানাডাতে ৫৯, সুইডেনে ৪৭, কাতারে ৩৫, নরওয়েতে ৩৫, এঙ্গোলাতে ৪৫, তাইওয়ানে ৩৫ বছর পর্যন্ত রয়েছে। আর আমাদের দেশে ৩০ এর সীমা রেখা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে চাকরি প্রার্থীদের।
আর সে কারণেই চাকরীর বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য রাজশাহী বিভাগে জিরো-পয়েন্টে ২৬ নভেম্বর ও ৩০ নভেম্বর খুলনা বি এল কলেজে সকাল ১১ টায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হবে বলে জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার দাস।
উল্লেখ্য , গত ৩১ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখে নবম জাতীয় সংসদের তৎকালীন মাননীয় স্পিকার বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার জন্য ৭১ বিধিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে ২১তম বৈঠকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করেন।
নবম জাতীয় সংসদের বহু সংসদ সদস্য এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকগণও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ বহু এমপি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন এবং প্রায় প্রতিটি অধিবেশনেই এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় একটি বিষয় সংসদে এত বার ওঠার পরও কেন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না তা বড় বিস্ময়কর।