রাতের অন্ধকারে নাফ নদী পেরিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে টেকনাফের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হলে রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটলেও গত এক সপ্তাহের মধ্যে অনুপ্রবেশের হার আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে শনিবার রাতে অন্তত ৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া, বালুখালী, লম্বাবিল, কাঞ্জরপাড়া, খারাংখালী, ঝিমংখালী, উনচিপ্রাং, হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া, নয়াপাড়া, নাথমুড়াপাড়া, গুদামপাড়া, ফুলের ডেইল, হোয়াব্রাং, নাইক্ষ্যংখালী, আনোয়ার প্রজেক্ট সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এ অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে।
রোববার টেকনাফ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
অনুপ্রবেশের পর রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, অনিবন্ধিত লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প, নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘরে ও ঝোপঝাড়-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেককে বিভিন্ন যানবাহনে কক্সবাজারের দিকে যেতে দেখা গেছে।
টেকনাফের বেশ কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের গৌজিবিল, রাইম্যাবিল, জাম্বনীয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে আসা কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়ে অধিকাংশ পুরুষদের আটক করে নিয়ে যায়। তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিবারের অনেককে হত্যা করে ও নারীদের ধর্ষণ করে। তারা মিয়ানমারের নাফ নদী উপকূলে প্যারাবন ও জঙ্গলে অনাহারে-অর্ধাহারে বেশ কয়েকদিন কাটানোর পর শেষে কোনো উপায়ান্তর না দেখে জীবন বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আরও অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানায় তারা। টেকনাফ সীমান্তের দালাল ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে মিয়ানমারে নৌকা পাঠিয়ে তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে তাদের জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে।
আবার এপারে নারীরা শিকার হয়েছে লুটপাটের। তাদের পরিধেয় স্বর্ণালংকার দালালরা ছিনিয়ে নিয়েছে।
ওই দলের একজন জানায়, তাদের সঙ্গে অন্তত ৫শ’ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এভাবে প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে শনিবার রাতে ৫শ’ থেকে ১ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এভাবে শুধু শনিবার রাতেই ৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জানা গেছে। এদিকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের চেয়ারম্যান দুদু মিয়া জানান, অনেক অসহায় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভোরে সীমান্ত পার হয়ে ক্যাম্পে এলে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গোয়েন্দা বিভাগের লোকজনকে মুঠোফোনে সেই সংবাদ জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা চায় না সীমান্ত দিয়ে নতুন কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটুক। তারা চায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে যাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেয়া হয়। এদিকে বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি সদস্যরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য। তারপরও কিছু কিছু এলাকায় দালালদের সহযোগিতায় কিছু রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।