প্রতিদিনই আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ি, স্কুল নয়তো অফিসে কাটিয়ে থাকি। সবসময় চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকায় আমাদের শরীর পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় না। এতে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি না হওয়ায় নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়। ফলে নানা দিক থেকে কাবু হয়ে অসময়ে আমাদের মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। ভিটামিন ডি এর অন্য নাম হল সানশাইন ভিটামিন।
খাবারের পাশাপাশি যার অন্যতম উত্স সূর্যের আলো। এর উপকারিতা বহুমুখী। রক্তে মিশে থাকা ভিটামিন ডি হাড় ও কোষের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ত্বকের জ্বালা কমাতেও সাহায্য করে। একইসঙ্গে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ডি। এবার জেনে নিন ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে- অবসাদ বাড়ায় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা চাপে এমনিতেই অবসাদের শেষ নেই। রোদের অভাব সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ব্রিটিশ জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রির সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, যাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ কম, তাঁদের অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অন্যদের ডাবল। বিজ্ঞানীরা ৩১ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। গবেষকরা বলেছেন, মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস সহ কিছু অংশ ভিটামিন ডি-র সাহায্যে মন চনমনে রাখতে সাহায্য করে। যাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি কম, তাঁদের মধ্যে স্ফূর্তিও তুলনামূলকভাবে কম। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের শক্তি কম গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি বেশি, তাঁরা ক্যান্সারের সঙ্গে বেশি ফাইট করতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভিটামিন ডি ১০ শতাংশ বাড়লে ক্যান্সারে সারভাইভালের সম্ভাবনা ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। প্রস্টেট ক্যান্সারের বিপদ বাড়ায় ক্লিনিক্যাল ক্যান্সার রিসার্চের জার্নালে উল্লেখিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলে প্রস্টেট ক্যান্সারের বিপদ ৪ থেকে ৫ গুণ বেড়ে যায়। ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝেইমার প্রাপ্ত বয়স্করা যদি বেশি মাত্রায় ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে ভোগেন, তাঁদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার প্রবণতা ৫৩ গুণ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে রয়েছে অ্যালঝেইমারের বিপদ। সোরিয়াসিস আর্থারাইটিস বাতের যন্ত্রণার পিছনেও রয়েছে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি। গবেষণায় দেখা গেছে, সোরিয়াটিক আর্থারাইটিসে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের ৬২ শতাংশের শরীরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন ডি নেই। হার্টের রোগ যাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ কম, তাঁদের করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ৩২ শতাংশ বেশি।
নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আড়াই গুণ বেশি। স্কিতজোফ্রেনিয়ার প্রবণতা বেশি সাইকিয়াট্রিক হেলথের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র গুরুত্ব অসীম। রক্তে ভিটামিন ডি কম থাকলে স্কিতজোফ্রেনিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। স্নায়ুর সমস্যা পার্কিনসন্স, ক্লোরোসিসের মতো রোগে যাঁরা আক্রান্ত, ভিটামিন ডি-র ঘাটতি তাঁদের শরীরে স্নায়ুর সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। অপরিণত মৃত্যু ভিটামিন ডি-র অভাবে কীই না হতে পারে! নানা দিক থেকে শরীরকে কাবু করে ফেলে এই ঘাটতি। যার ফল অসময়ে মৃত্যু। সূর্যের আলোর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এসবের প্রতিকার। কাজেই দেরি না করেই আজ থেকে সচেতন হোন। শরীরে ভিটামিন ডি’এর চাহিদা পূরণ করুন। জীবন বাঁচান। তথ্যসূত্র: জিনিউজ।