নিউজ ডেস্ক
অনলাইনে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার নামে নতুন প্রতারণার ফাঁদ ফেলেছে ইন্টারন্যাশনাল কালচার ইউনিভার্সিটি (আইসিইউ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। নাম দিয়েছে ভার্চুয়াল ডিগ্রি।
এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে ডিগ্রি দেয়া এই প্রতিষ্ঠানটির দাবি, জাতিসংঘ, আইএআরসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আইসিইউ’র সনদধারীরা জাতিংঘসহ আন্তর্জাতিক সব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা. যুক্তরাষ্ট্রসহ অর্ধশতাধিক দেশের স্কলারশিপও মিলছে।
জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি হিসেবে স্বীকৃতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে আবেদন করে। তবে এ পর্যন্ত কমিশনের অনুমোদন পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
এমফিল, পিএইচডি দেয়ার নাম করে ২০১০ সাল থেকে রাজধানীতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গজিয়ে ওঠে। গণমাধ্যমে এ সংত্রুান্ত সংবাদ প্রকাশের পর এসব প্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণযোগ্য নয় বলে সতর্ক করে শিক্ষা মন্ত্রণায় ও ইউজিসি। এরপর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে এই প্রতারণা শুরু করেছে আইসিইউ। বিষয়টি ইউজিসি’র নজরে আসার পর সংশ্লিষ্ট ডেস্ক অফিসারকে ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান।
বিষয়টি কথা স্বীকার করে ইউজিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, কত ভুয়া ডিগ্রি কত দিক থেকে কতজন নিচ্ছে সব খবর কী আমরা রাখতে পারি? তবে কালচার ইউনিভার্সিটি অনলাইনে পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবো।
তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হবে না। যারা এখানে ভর্তি হবে তারা প্রতারিত হবে।
প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটের দেয়া নম্বরে ফোন দিলে ড. সুলতান মোহাম্মদ রাজ্জাক নামের একজন প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট পরিচয় দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়ার সব কৌশল বলেন।
তিনি বলেন, এখানে কোন ক্লাস করতে হয় না। শুধু অনলাইনের মাঝে-মধ্যে হাজিরা দিলেই হবে। পিএইচডি জন্য ৩ লাখ ৩ হাজার আর এমফিলের জন্য ১ লাখ ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। এমফিলের জন্য প্রথম ২০ হাজার আর মাসিক ৬৫০০ টাকা। পিএইচডিতে এককালীন ২৫ হাজার মাসিক ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। তবে এমফিল করার পর পিএইচডি করলে ৬০ হাজার টাকা কম নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এমফিলের থিসিস দিয়েই পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়া যাবে। তিনি দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি আন্তর্জাতিক মানের হলেও থিসিস সুপারভাইস করবেন দেশীয় ৫ জনের একটি টিম। কারণ বিদেশি কাউকে দিয়ে সুপারভাইস করালে খরচ বেশি পড়বে। তার দাবি তাদের প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া যাবে কারণ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কমনওয়েলথ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে অ্যাক্রিডিটেশন নিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটটিকেও সাজানো হয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সরকারসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের লোগো দিয়ে। সার্টিফিকেটে এসব প্রতিষ্ঠানের লোগো থাকবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের তাদের ডিগ্রির মূল্য না থাকলে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটের উপরের দিকেই রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের লোগো, জাতিসংঘের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট, ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল অ্যাফেয়ার্স, ইউনাইটেড নেশনস একাডেমিক ইমপ্যাক্ট, ইউনাইটেড নেশনস সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নলেজ প্ল্যাটফর্ম, এসআইএসএম নলেজ, ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন নেটওয়ার্ক, ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অরগানাইজেশন, ইউনাইটেড নেশনস ডিকেইড অব এডুকেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা সিটি করপোরেশন, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক ফর ইনোভেশন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এশিয়া প্যাসিফিক কোয়ালিটি নেটওয়ার্ক, ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস এসব প্রতিষ্ঠানের লগো।
সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠান থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একজন প্রিন্সিপাল পিএইচডি নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, আরও অনেকে ডিগ্রি নিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোন অনুমোদন পাননি বলে নিজেই স্বীকার করেন ডক্টর দাবিদার রাজ্জাক।
উল্লেখ্য, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান ভুয়া এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার দোকান খুললেও গণমাধ্যমে খবর আসার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ড. সুলতান মোহাম্মদ রাজ্জাক পুরো বিষয়ে বলেন, আমরা ইউজিসি’র কাছে অনেক আবেদন করেছি। কিন্তু আমাদের অনুমোদন দেয়নি। বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমরা আবেদন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কারিকুলাম ও মতামত চেয়ে চিঠি দিলেও ইউজিসি সাড়া দেয়নি।
তিনি বলেন, তারপরও আমরা শুরু করেছি। আশা করি সরকার একদিন আমাদের ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আমাদের ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি হিসেবে অনুমোদন দেবে। সূত্র: মানবজমিন