সোসাইটিনিউজ ডেস্ক: টাঙ্গাইলে তামাক চাষের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে কৃষি জমি গুলো হারাচ্ছে উর্বরতা। কৃষি কর্মকর্তাদের নজরদারীর অভাবে তামাক চাষের পরিমাণ দিনদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে জেলার ৪টি উপজেলার চরাঞ্চলের শত শত হেক্টর জমিতে এ চাষ আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে বৃটিশ ও আকিজ টোবাকো কোম্পানী। কোম্পানীগুলোর সহযোগিতা আর বেশী লাভের আশায় নিশ্চিত ক্ষতি জেনেও এ তামাক চাষে ঝুকে পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জেলার ৫টি উপজেলা টাঙ্গাইল সদর, ভূঁইয়াপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ারে তামাক চাষ হয়েছিল ৯৫ হেক্টর জমিতে আর ২০১৬ সালে তা বৃদ্ধি ৪টি উপজেলায় দাঁড়িয়েছে ১৮০ হেক্টর। এ উপজেলা গুলোর মধ্যে রয়েছে ভূঁইয়াপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও দেলদুয়ার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষা নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া ও মোকনা এবং দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি গ্রামের কৃষি কর্মকর্তাদের নজরদারীর অভাবে প্রায় শত একর কৃষি জমি তামাক চাষে সয়লাব হয়ে উঠেছে। সরকারি কোনো রূপ নিষেধাজ্ঞা না থাকার ফলে কৃষকদের এ চাষে উৎসাহ জোগাচ্ছে বৃটিশ টোবাকো ও আকিজ টোবাকো কোম্পানী। এ কোম্পানীগুলো তামাক বীজসহ সার সরবরাহের মাধ্যমে দিনদিন এ তামাক চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলেছে বলেও কৃষকদের সুত্রে জানা গেছে। চরাঞ্চলের এ জমি গুলোতে অন্যান্য সফলের চেয়ে তামাক চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ চাষে ব্যাপক ভাবে ঝুকে পড়েছে।
তামাক চাষে লিপ্ত এ সকল এলাকার কৃষক ও কৃষক পরিবারের অভিযোগ, তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ বা এ চাষ বন্ধে কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো রূপ পদক্ষেপ না থাকায় দিনদিন এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি শতাংশ জমি বাবদ পাঁচ কেজি সার ও পরিমাণ মত তামাক বীজ সরবরাহ করছে বৃটিশ ও আকিজ টোবাকো কোম্পানী কর্তৃপক্ষ।
এ তামাক চাষে শতাংশ প্রতি প্রায় এক হাজার টাকার তামাক উৎপাদন করা যায়। তামাক চাষে পরিশ্রম বেশী ও মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তামাক অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ কাজে লিপ্ত কৃষকরা। অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে এ কৃষি জমিগুলো নষ্ট হওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এসময় তামাক শুকানোসহ ঘরে মজুত করে রাখতে তাদের শারীরিক নানা সমস্যার কথাও জানায় এ কৃষক পরিবারগুলো।
তারা অভিযোগ করে বলেন, কোম্পানীগুলো এ চাষ বৃদ্ধিতে তামাক বীজ ও সার সরবরাহ করলেও স্বাস্থ্য সচেতনতায় গায়ে এ্যাপ্রোন বা মাস্ক প্রদান করে না। এতে তাদের হাতে চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবুল হাসিম জানান, সরকারি কোনো বিধি নিষেধ না থাকায় তামাক চাষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে টোবাকো কোম্পানীগুলো নগদ অর্থ আর সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এ অবস্থা স্বত্তেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষি কর্মকর্তারা জমির উর্বরতা নষ্ট ও শারীরিক কুফল তুলে ধরে এ চাষরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, তামাক চাষ বন্ধে সরকারি কোনো আইন না থাকায় এটি বন্ধে প্রশাসন কঠোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। তবে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ চাষ বন্ধে এর ক্ষতিকর দিক উপস্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের এ চাষ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করছে। খুব অল্প দিনের মধ্যেই এ চাষ বন্ধ করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেছেন তিন।
সূত্র: জাগো-নিউজ