কয়েক বছর আগেও মাথার লম্বা চুল দিয়ে গাড়ি টেনে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন আলী আহম্মদ। শারীরিক কসরতের কারিশমায় এসেছিলেন সবার নজরে।
অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে উঠে এসেছিলেন জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতেও। তখন মুখে মুখে তার নাম আর গুণের চর্চা ছিলো। কিন্তু তারপর তার আর খোঁজ খবর রাখেনি কেউ ।
এখন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে শিলপাটা কোটানোর কাজ করেন। কোনো পেশা না থাকায় মাস্টাররোলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন নওহাটা পৌরসভায়। তিনিই রাজশাহীর পবা উপজেলার সদর পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের আলী আহম্মদ।
আট বছর আগে অসুখে মাথার সেই লম্বা চুল ঝরে গেছে। এক সময় লম্বা চুল ছিলো। সেই চুল দিয়েই গাড়ি টেনে চলে যেতেন মাঠের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। কিন্তু আট বছর আগে এক কঠিন অসুখ তার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। মাথায় থেকে গাড়ি টানা সেই চুল ঝরে গেছে। ডান পায়ে আর শক্তি পান না। শরীরের শক্তি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তাই স্বর্ণালি অতীত এখন কেবল স্মৃতি। এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাই অবসর সময়ে হাটে-ঘাটে ঘুরে খেলা দেখান বিষাক্ত লতাপাতা আর জীবন্ত পোকামাকড় খেয়ে। এতে খুশি হয়ে যে, যা দেন তাতেই তুষ্টি খোঁজেন আলী।
এক সময় ২৪ ঘণ্টা মাটির মধ্যে গর্ত খুঁড়ে তার ভেতর থেকে মাইকের সাহয্যে ওপরের দর্শকদের গান গেয়ে শোনানো, চুলে দড়ি বেঁধে শূন্যে ঝুলতে পারা, জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে দেখানো, বুকের ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা তুলে পার করা দেখিয়ে পথে প্রান্তেরের মানুষকে বিনোদিত করেছেন তিনি ।
এতেই বিনোদন পেয়ে মানুষ টাকা-পয়সা দেন তাকে। টিকটিকি, মশা-মাছি আর ছোটখাটো পোকামাকর খেয়ে হজম করা তার কাছে মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল সাপ ও ইঁদুর খান না। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হন। কিন্তু কিছুদিন বিছানায় পড়ে থেকে আবার খেলা দেখানো শুরু করেন।
জানা যায়, তার খেলা দেখে ভালো লাগায় পৌরসভার মেয়র পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ দিয়েছেন। প্রায় পাঁচ বছর থেকে তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন। কিন্তু আজও তার চাকরি স্থায়ী হয়নি। ফলে চাকরির ওই টাকায় সংসার চলে না তার। খেলা দেখিয়ে কিছু আয়ের চেষ্টা করেন এ বাজিকর।
আলী আহম্মদের বাড়িতে স্ত্রী রয়েছেন। পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ১৭ বছর বয়সে। এখন ছোট ছোট আর চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তার। তারা সবাই ছোট, পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনকারী।
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরিটি স্থায়ী হলে অন্তত: বাকিটা জীবন কোনোভাবে ডাল-ভাত খেয়ে পার হয়ে যাবে এমনটিই প্রত্যাশা আলী আহম্মদের।