সোসাইটিনিউজ ডেস্ক:
বিভিন্ন ধরনের ফলের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২৫ হাজারের বেশি কৃষক ও ফল চাষে উদ্যোগী হয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পর পর বাম্পার উৎপাদন এবং আকর্ষণীয় মূল্য কৃষক ও সাধারণের মধ্যে ফল চাষে উৎসাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ মূল্যের পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায় এমন চাষের ফল চাষ তাদের আগ্রহী করে তোলে। এতে তাদের নিজের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পরেও লাভবান হচ্ছে এবং ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে অত্যন্ত লাভজনক এই ফল চাষে নীরব বিপ্লব সাধনে ফল চাষ আরো সম্প্রসারণে সরকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় কৃষক ও উৎসাহী সাধারণ ব্যক্তির বাগান ও বসত বাড়ির ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বার্ষিক ৬৩৮ কোটি টাকা মূল্যের ৮৮ হাজার টন ফল উৎপাদন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের (ডিএই) হটিকালচার বিশেষজ্ঞ খন্দকার মেসবাহুল ইসলাম বলেন, প্রধানত বেসরকারি খাতে ফলের উৎপাদন অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে নীরব বিপ্লব সাধিত হচ্ছে।
কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং গবেষণা সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে এবং ফলের বাগান, বসতবাড়ি ও পতিত জমিতে ফল চাষ সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ অচিরেই ফলপ্রসু হতে যাচ্ছে।
কৃষক ও সাধারণ উদ্যোক্তা চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারি জেলায় তাদের বাগান ও বসতবাড়িতে ৩০৮ কোটি টাকা মূল্যের ৭৭ হাজার টন আম উৎপাদন করেছে।
মেজবাহুল ইসলাম বলেন, রংপুর অঞ্চলে বর্তমানে ৫ হাজার বাগানে ৪.৭৫ লাখের বেশি এবং বসতবাড়ি ও সংলগ্ন জমিতে ১২.৫০ ফলবান গাছ থেকে আম পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি এ বছর রংপুর অঞ্চলে বাগান ও বসতবাড়ি থেকে ১৮০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ৯ হাজার টন লিচু উৎপাদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলে ৩ হাজার বাগানে ২.৫০ লাখ বসতবাড়ি সংলগ্ন ১৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখের বেশি ফলবান লিচু গাছ রয়েছে।
তিনি জানান, এ অঞ্চলের কৃষকরা বার্ষিক ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার টন কলা, পেঁপে, লটকোন, বড়ই, কাঁঠাল, ব্লাকবেরি, স্ট্রবেরি, জলপাই, বেল, পেয়ারা, পানিফল, বাঙ্গি, আমলকি ও আঙুর এবং অন্যান্য স্থানীয় জাতের ফল উৎপাদন করছে।
মেজবাহুল বলেন, পর পর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি আকর্ষণীয় বাজার মূল্য পাওয়ায় কৃষক ও সাধারণ উদ্যোক্তারা প্রতিবছর সকল ধরণের ফল চাষ সম্প্রসারণ করছে পাশাপাশি এ অঞ্চলে কৃষি শ্রমিকদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশ’র কৃষি ও পরিবেশ সমন্বয়ক মামুনুর রশিদ বলেন, এ অঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, দরিদ্র পরিবার, দুস্থ মহিলা এবং সাধারণ মানুষ ফল চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে।
তিনি বলেন, বাউকুল, আপেল কুল জাতীয় দ্রুত ফলনশীল এবং অন্যান্য ফলের চাষ দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার কৃষক তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।
ফল উৎপাদক নাসিমুল হক, মমিনুর রহমান ও বুলবুল আহমেদ বলেন, অন্যান্য কৃষক ও সাধারণ আগ্রহীদের মতো তারা উচ্চ মূল্যের দ্রুত ফলনশীল এবং প্রচলিত ফল উৎপাদনের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ভিক্ষুক, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং সাধারণ লোকরা তাদের বাগান ও বসতবাড়িতে ফল উৎপাদনের তাদের পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করছেন।
নার্সারি মালিক মোখলেসুর রহমান, আবদুস সোবহান ও আবদুল মালেক বলেন, তাদের নার্সারি থেকে প্রতিবছর প্রচলিত উচ্চ মূল্যের এবং দ্রুত ফলনশীল জাতের ফলের চারা বিক্রির মাধ্যমে তারা লাভবান হচ্ছেন।
এগ্রিকালচার অব বিআরএসি ইন্টারন্যাশনাল’র সহকারি পরিচালক ড. এম এ মজিদ গ্রামীণ অর্থনীতি জোরদারে এবং সফল জাতি গঠনে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ফল চাষ আরো সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।