ফুলবাড়িয়ার এমপি মোসলেম যুদ্ধাপরাধী : কাদের সিদ্দিকী
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী।
পুলিশের সঙ্গে ফুলবাড়িয়া কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায়ও এই সংসদ সদস্যের দায় দেখছেন তিনি।
তবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম বলছেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী শুক্রবার ফুলবাড়িয়ার সংঘর্ষস্থল পরিদর্শন করে বিকালে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
কলেজে ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশি হামলায় শিক্ষকসহ দুজন নিহতের ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ফুলবাড়িয়ার বর্তমান সংসদ সদস্যের এ কাজটা করা মোটেই ভালো হয়নি।
“মুক্তিযুদ্ধের সময় ভদ্রলোক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাই। দলিল-দস্তাবেজ প্রমাণ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পাশে ছিলেন, সাথে ছিলেন, হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করেছেন, যা করা দরকার তাই করেছেন।”
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বঙ্গবীর নামে পরিচিত কাদের সিদ্দিকী বলেন, একাত্তরে ফুলবাড়িয়ার রাঙামাটিতে শত্রুদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন যুদ্ধ করতে হয়েছে তাদের।
“ফুলবাড়িয়াকে আমি খুব ভালো করে চিনি, ভালো করে জানি। যুদ্ধের মধ্যে আমি বেশ কয়েকবার ফুলবাড়িয়া এসেছি। সেই সময় যাকে বারবার গ্রেপ্তার করতে গিয়ে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, সেই মাননীয় এমপি সাহেব এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত।”
বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নামেই একাত্তরে ‘কাদেরিয়া বাহিনী হয়, টাঙ্গাইলভিত্তিক এই যোদ্ধারা আশপাশের অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন।
মোসলেমের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ময়মনসিংহ মহানগর ইউনিটের সদস্য সচিব সেলিম সরকারও।
একাত্তরে মোসলেমের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে মোসলেম উদ্দিন ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। পরে দেশে ফিরে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে হানাদাররা যা যা করেছে, উনিও সেগুলো করেছেন।”
মোসলেম উদ্দিনের যুদ্ধাপরাধের’ বিচার চেয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।
“আমি শুধু এ কথাটা ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে বলবার জন্য এসেছিলাম যে, জনাব মোসলেম উদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কোর্টে নেওয়া হলে আমি প্রধান সাক্ষী হতে চাই, এক নম্বর সাক্ষী হতে চাই।”
মোসলেম উদ্দিন মোসলেম উদ্দিন এ বিষয়ে মোসলেম উদ্দিন বলেন, “আমি ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য ছিলাম। সংবিধান রচনাকারী হিসেবে মূল সংবিধানে আমার স্বাক্ষর রয়েছে, যার নম্বর ২৮৩, এটি আবার জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
“একজন সংবিধান রচনাকারী কি যুদ্ধাপরাধী হতে পারে? কাদের সিদ্দিকী একজন বড় মাপের যোদ্ধা। তিনি এসব কথা বলার আগে ভালোভাবে দেখে শুনে বলা উচিত বলে আমি মনে করি।”
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান তালুকদার, জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদসহ ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত রোববার ফুলবাড়ীয় কলেজ জাতীয়করণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ (৫০) ও পথচারী সফর আলী (৭০) মারা যান।
প্রেসক্লাবে আসার আগে ফুলবাড়িয়া কলেজ মাঠে এক সভায় বক্তব্য দেন কাদের সিদ্দিকী।
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “পুলিশের এত বাড় বাড়ছে কেন জানেন, আপনে ভোট ছাড়া নেতা হইছেন।
“পুলিশ সব সময় কয়- সরকার বানাইছি আমরা, সরকার আমগোর কী করবে? কালিহাতীতে মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করার সময়েও বলে। এখানে আমি শুনে অবাক হলাম, এই কলেজের ছাত্রীদের তাদেরও বলে ‘মারব’।”
ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষক হত্যা নিয়ে তিনি বলেন, “আমার শিক্ষক মাইরা ফেলাইছে। আমি যদি এই কলেজের ছাত্র হইতাম, তাইলে রানে রানে টান দিয়া তিনটা পুলিশ মাইরা ফালাইতাম। ওই যে কৃষ্ণ কংসরে রানে রানে টাইন্যা ফাইড়া ফেলাইছিল, ওই রকম এই পর্যন্ত ফাড়তাম।”
“কিন্তু আমি এইখানে মারামারি করতে আসি নাই। হাসিনা-খালেদা পারুক না পারুক আমি দেশে শান্তি চাই।”
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে সাবধান করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “হাসিনা বোন আপনাকেও বলি, আপনে আর বাইড়েন না। আপনারে মারার জন্য ওই তেলের পাইপ খুলে থুইছিল প্লেনের। আপনি যাদের নিয়ে নাচেন, এই রকম নাইচেন না। যারা আপনের বাপেরে মারছে, তারা কিন্তু আপনেরে ছাড়বে না। সাবধান হন, মানুষের মন জয় করেন।
“পুলিশের অনুমতি নিয়ে যারা মিছিল করে, বিক্ষোভ করে তারা পুলিশের পায়ের নিচেই থাকে। পুলিশের বাড়িই তাদের খেতে হয়। এই দেশটা বড় পুলিশি দেশ হয়ে গেছে। এখানে কোনো বিরোধী দল নেই,” বলেন তিনি