আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গতবছরের ৫ সেপ্টেম্বর একটি ছবি বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু করেছিলো। দেখিয়েছিলো কতটা নির্মমভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে মানবতা।
সিরিয়ার উদ্বাস্তু আব্দুল্লাহ কুর্দির তিনবছরের শিশু সন্তান আয়লান কুর্দির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তুরস্কের কাছাকাছি এক সমুদ্রতট থেকে। লাল টি শার্ট আর নীল প্যান্টে সমুদ্রের তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লান সবার মনকেই নাড়া দিয়ে যায় এক নিমেষে।
এবার আরেক আয়লানের ছবি দেখলো বিশ্ববাসী। মিয়ানমার সীমান্তে এক রোহিঙ্গা শিশুর মরদেহ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় কাদামাটির মধ্যে। যেন ঠিক আয়লানের মতোই।নিমেষে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। উঠে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণ থেকে রেহাই পেতে পলায়নরত রোহিঙ্গাবাহী নৌকায় গুলি চালিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি)।
গুলিতে তিনটি নৌকাডুবির ঘটনায় চার শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৩১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার দিনগত রাতে রাখাইনের মংডুর উত্তরাঞ্চলে নাফ নদীতে এই ঘটনা ঘটে।
সোমবার মিয়ানমার সময় সকাল ৭টার দিকে নাফ নদীর তীরে দুটি শিশু এবং একজন নারীর মরদেহ পড়েছিল।
এরমধ্যে একটি শিশু মাটিতে এমনভাবে পড়েছিল যার সঙ্গে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার শরণার্থী শিশু আইলান কুর্দির মরদেহের সাদৃশ্য পাওয়া গেছে।
মালয়েশিয়াভিত্তিক রোহিঙ্গা ভিশন টিভির মাধ্যমে এই ছবিটি প্রচার হয়েছে যা এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
শিশু হত্যার এই বিভৎস চিত্র দেখে অনেকেই মিয়ানমারের হাত থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের উদ্ধারে দেশটিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছেন।
আরভিশন টিভি জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকাগুলোর আরোহীদের বেশির ভাগই উত্তর মংডুর রাইমাবিল গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।
গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশের মংডু এবং পার্শ্ববর্তী রাতেডং শহরের তিনটি চৌকিতে অজ্ঞাত পরিচয়ধারীদের হামলায় ১৩ জন সীমান্তরক্ষী নিহত হয়।
এ ঘটনার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের অভিযুক্ত করে তাদের গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, অভিযানের নাম করে মিয়ামার সেনাবাহিনী, বিজিপি ও পুলিশের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানা হচ্ছে। তারা নারীদের ধর্ষণ, হত্যা এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৫০জন রোহিঙ্গা নিহত, সহস্রাধিক গ্রেফতার এবং বহু নারী ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছে।