গত ৮ নভেম্বর হঠাৎ করেই সারা দেশকে চমকে দিয়ে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করার ঘোষণা দেয় ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, দুই মাসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট পরিবর্তন করে নিতে হবে সবাইকে। বাজারে ছাড়া হচ্ছে নতুন ৫০০ ও ২০০০ রুপির নোট। মূলত, কালোটাকা ঠেকানোর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ ঘোষণার পর ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলেও অবস্থান থেকে এক চুল নড়েনি সরকার। লাইন ধরে, সারি বেঁধে প্রতিদিন রুপি পরিবর্তন করছেন ভারতবাসী। সময় সীমার তিন সপ্তাহ বাকি থাকতেই ব্যাংকে জমা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ কোটি রুপি।
মুদ্রা রহিতকরণ বিষয়টি ইতিহাসে নতুন নয়। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির স্বার্থে মুদ্রা রহিতকরণের সিদ্ধান্ত এসেছে। কোনো কোনো দেশ সফল হলেও ব্যর্থতার হার কম নয়। মুদ্রা রহিতকরণের সিদ্ধান্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। জনগণের হাতে অর্থসংকট দেখা দেয়। ভেঙে পড়ে অর্থনীতির ভিত্তি। এমন কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হলো।
নাইজেরিয়া: ১৯৮৪ সালে তৎকালীন নাইজেরিয়ার সামরিক সরকারের প্রধান মোহাম্মদ বুহারি নতুন নোট ছাড়ে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাতিল করে দেন পুরোনো সব নোট। রং পাল্টে নতুন নোট ছাপা হয়। মূলত, দুর্নীতি প্রতিরোধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতিহাসে এই মুদ্রা রহিতকরণের সিদ্ধান্ত ব্যর্থ বলেই বিবেচিত। এই সিদ্ধান্তে দেশটির ঋণ বেড়ে যায় ব্যাপক এবং মূল্যস্ফীতি এত ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। অর্থনীতির ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
ঘানা: কর ফাঁকি ও বাজারে নগদ তারল্য কমাতে একই সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৮২ সালে তৎকালীন ঘানা সরকার। দেশটির মুদ্রার নাম সেডিস। ৫০ সেডিস মানের নোট বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে এর ফলে এই দেশের মানুষ কালোবাজারকে সমর্থন করা শুরু করে। অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়, যা স্পষ্টত অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়।
উত্তর কোরিয়া: ২০১০ সালে উত্তর কোরিয়া মুদ্রা রহিতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। মুদ্রাব্যবস্থা পরিবর্তনের কারণে সমাজতান্ত্রিক এ দেশটিতে চরম খাদ্যসংকট ও গণ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। মুদ্রাব্যবস্থা পরিবর্তনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০০ মূল্যমানের ‘উয়ান’-এর পরিবর্তে ১ ‘উয়ান’-এর নতুন নোট সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ছাড়া পুরোনো উয়ান পরিবর্তনের পরিমাণের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে পুরোনো মুদ্রাকে নতুন মুদ্রায় পরিবর্তনের সর্বোচ্চ পরিমাণ ঠিক করা হয় এক লাখ থেকে দেড় লাখ উয়ানের মধ্যে। ফলে দেশটির সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন: মিখাইল গর্ভাচেভের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে ৫০ এবং ১০০ রুবল মানের নোট বাতিল করে দেওয়া হয়। মূলত, কালো টাকা রহিতকরণ এবং মুদ্রার মূল্যমান বাড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এর ফলে শিল্প উৎপাদন কমে যায়, বেকারত্ব বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে থাকে লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি৷ এর আট মাস পর আগস্টে অভ্যুত্থানের স্বীকার হয় গর্ভাচেভ সরকার।
১৯৯৮ সালে আবারও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা সফল হয়। ২০১০ সালেও মুদ্রা রহিতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া নেয় সোভিয়েত সরকার।
মিয়ানমার: কালোবাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ১৯৮৭ সালে দেশটির ৮০ শতাংশ মুদ্রা বাতিল করে দেয়। আর এর প্রতিবাদে প্রথমবারের মতো রাস্তায় নামে দেশটির ছাত্ররা। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়াটাইমস, বিজনেস ইনসাইডার।