হাতিরঝিলের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি; আসছে বিজয় দিবসে সেগুলো যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার মধ্যরাতে চারটি ট্রেইলরে করে চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। আরও দুটি ওয়াটার ট্যাক্সি আগামী কয়েকদিনের পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে হাতিরঝিল প্রকল্পের গাড়ি পার্কিং এলাকায় রাখা কমলা ও সাদা রঙের ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো নিয়ে কৌতুহলী হয়ে উঠেছেন পথচারীরাও। সেখানে অবস্থানরত কর্মীদের নানা প্রশ্ন করে তারা জেনে নিতে চাইছেন- কী হবে এই ওয়াটার ট্যাক্সি দিয়ে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মেজর কাজী শাকিল হোসেন জানান, নৌযানগুলো ক্রেন দিয়ে পানিতে নামানোর পর মঙ্গলবার সেগুলোতে ইঞ্জিন বসানো হবে। বাকি কাজ শেষ করে সেগুলো চালু করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক মো. জামাল আকতার ভূঁইয়া তিনি বলেন, “আমাদের একটা প্রোগ্রাম আছে ১৬ ডিসেম্বর। আশা করছি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয় অনুষ্ঠানে থাকবেন। তারা সময় দিলে সেদিনই এগুলোর চলাচল উদ্বোধন করা হবে।”
সোমবার ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো দেখে থামলেন মধুবাগের বাসিন্দা আসলাম উদ্দিন। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় কয়েকটি ছবিও তুলে নিলেন। তার বিশ্বাস, হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হলে মানুষের উপকারই হবে। তবে হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখার ওপরও জোর দিচ্ছেন তিনি।
“পানিতে যে দুর্গন্ধ! আমাদের বাসা থেকেও টের পাওয়া যায়। এই পানির ওপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করাটা কঠিন হবে। এজন্য আগে পানি পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।”
যানজটে পড়তে হবে না, এ কারণেই ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো জনপ্রিয় হবে বলে মনে করেন বনশ্রীর বাসিন্দা শিবলু জামান, যিনি একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা।
“সময় যাই লাগুক, একটা নির্দিষ্ট সময় পর গন্তব্যে পৌঁছুতে পারব। এটাই ওয়াটার ট্যাক্সির সুবিধা। তবে এগুলো সময় মতো ছাড়তে হবে।”
ওয়াটার ট্যাক্সির ইঞ্জিন এসেছে চীন থেকে। প্রতিটি ওয়াটার ট্যাক্সি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের একটি কারখানায় এসব ওয়াটার ট্যাক্সির কাঠামো তৈরি হয়েছে। চারটির কাজ শেষ হওয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাকি দুটোও চলে আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ
মেসার্স ওয়াহিদ মিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০ বছর এই ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে।ওয়াটার ট্যাক্সিতে একবারে ৪৫ জন যাত্রী উঠতে পারবে। থাকবে একটি করে ছোট ক্যান্টিন, যেখানে কেক, বিস্কুট ও হালকা খাবার পাওয়া যাবে। ওয়াটার ট্যাক্সির টার্মিনাল থাকবে হাতিরঝিলের এফডিসি অংশে। সেখান থেকে ছাড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো গন্তব্যে পৌঁছাবে।
মেজর শাকিল জানান, এ ট্যাক্সিগুলো এফডিসি মোড় থেকে দুটি রুটে চলাচল করবে। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, বাড্ডা লিংক রোডের পথে ভাড়া হবে ২৫ টাকা, রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ৩০ টাকা।
“আমরা আপাতত ভাড়া এটাই ঠিক করেছি। এটা বাড়তে পারে, কমতেও পারে। তিন মাস মূল্যায়ন করে দেখব তাদের খরচ, যাত্রীসংখ্যা কেমন হয়। আয়-ব্যয়ের হিসাবটা করে আবার ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।”
বেশি গতিতে চললে হাতিরঝিলের পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ওয়াটার ট্যাক্সির গতি সীমিত রাখা হবে মেজর কাজী শাকিল হোসেন জানান।
“ইঞ্জিনগুলো ৪০ হর্স পাওয়ারের। আমরা চাইলেই বেশি গতিতে চালাতে পারব। কিন্তু হাতিরঝিলে আমরা অতিরিক্ত গতিতে চালাব না।”
ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হলে রাজধানীর একটি বড় অংশের লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন হাতিরঝিলের কর্মকর্তারা। বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কারওয়ান বাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবে।
নগরবাসীর সাড়া পেলে এ ট্যাক্সি সার্ভিস পরে গুলশান লেক হয়ে বারিধারাতেও সম্প্রসারিত করা হবে বলে হাতিরঝিল উন্নয়নপ্রকল্পের পরিচালক মো. জামাল আকতার ভূঁইয়া জানিয়েছেন।
“এফডিসি মোড় থেকে গুলশান লেক হয়ে বারিধারা পর্যন্ত এ সেবা পৌঁছে দিতে পারলে তা নগরবাসীর আরো বেশি উপকারে আসবে। এজন্য লেকের ওপর দিয়ে চলা বাড্ডা লিংক রোড ও গুলশান-বারিধারা সড়কে দুটি ব্রিজ করতে হবে।”