নাজমুল হুদা সুমন
“মেয়র, এমপি, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের থেকে ছাত্রলীগের স্বাধীনতা চাই।” বাক্যটি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সম্পাদকের। মুরুব্বীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছাত্রলীগ নেতারা তাদের থেকে মুক্তি চান। তারা চান রাজনৈতিক মুক্তি। যেনো ছাত্রলীগের কোনো কাজে এসব নেতারা নাক গলাতে না পারেন তার গ্যারান্টি।
জানা যায়,আওয়ামীলীগ নেতা ও এমপি-মন্ত্রীরা তাদের নিজেদের স্বার্থে ছাত্রলীগকে তুরুপের তাসের মত ব্যবহার করে। এতে হোমরা-চোমরা নেতারা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও জীবন দিতে হয় ছাত্রলীগের ফুটফুটে তরুণদের। নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এসব স্বার্থান্বেষীদের স্বার্থ উদ্ধার করতে হয় তাদের। সেক্ষেত্রে জীবনবাজী রাখতে হয় তাদের। অনেকসময় জেল ,জুলুম অার অত্যাচারতো আছেই। তবে কেউ মারা গেলে,জেলে কিংবা মেডিকেলে গেলে পিছুটান নেন এসব নেতারা। নিজের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হবে বলে ওইসব কর্মীদের অস্বীকার করেন মিডিয়ার সামনে। এমনকী যে ছেলেগুলো তার জন্য অস্ত্র ধরল সেই ছেলেকে শিবির কিংবা ছাত্রদলের চর বলে নিজেকে বাঁচিয়ে নেন ঐসব নেতারা।
গেলো কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিয়াজ চৌধুরীর মৃত্যুকে অনেকেই চট্রগ্রামের এক বড় আওয়ামীলীগ নেতার বলীর পাঠা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। যদিও দিয়াজ সেই নেতার সাথেই রাজনীতি করতেন কিন্তু ওই নেতার অন্য গ্রুপের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মরার কিছুদিন আগেও দিয়াজের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তার মাকে অপমান করা হয়। দিয়াজ সমর্থকদের দাবি এটা আত্মহত্যা নয়,হত্যা। তারা মনে করেন দিয়াজের খুনীদের বাঁচাতে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাল্টে দেয়া হয়েছে। অবশ্য হাইকোর্ট দিয়াজের লাশ পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বিরকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। তার দোষ তিনি মেয়র সাইদ খোকনের ডাকে হকার উচ্ছেদকালে পিস্তর উঁচিয়ে ফাকা গুলি করেছিলেন। শুধু বহিষ্কার নয় তার নামে মামলা করা হয় এবং কয়েকদিন অাগে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মহানগর অাদালত।
এর আগে গত বছর দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীলীগের দুই প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দ্বে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২ নেতা। পরে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এসব ঘটনা সারাদেশে অহরহ। জানা যায়, আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ছাত্রলীগকে যে যার মত করে ব্যবহার করে। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারী টেন্ডারগুলোতে শক্তি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয় ছাত্রনেতাদের। এতে ওইসব ইউনিটের প্রধানদের মোটা অংকের টাকা দেয়া হলেও যারা কর্মী তাদের ভাগে থাকে খুবই কম। অথচ রিস্কটা তাদেরই নিতে হয়। রাঘব বোয়ালরা যেখানে অফিসারের রুমে বাতাস খান কর্মীদের সেখানে বাইরে মারামারি করতে হয়,জীবন দিতে হয় কাউকে কাউকে। এসব কারণে একটি মহল ছাত্রলীগকে ধরে রেখেছেন নিজেদের বলয়ের মধ্যে। অার ব্যবসা করছেন নির্দ্বিধায়। কোথাও কোনো অফিসার একটু ঝামেলা করলেই প্রদর্শনী হয় অস্ত্রের,আর সেটা করানো হয় ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়েই।
বিভিন্ন জেলা,উপজেলা,মহানগর এমনকী ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোও এসব নেতাদের বাইরে যায়না। সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যারা যান কমিটি দিতে তাদের নিজেদের পছন্দের কাউকে দিতে পারেননা। এমনকী অনেকসময় ছাত্রলীগ নেতাদের স্বাক্ষর ছাড়াই আওয়ামীলীগ নেতাদের স্বাক্ষর দিয়েই কমিটি করা হয়। লালমনিরহাট ও চট্রগামে এরকম ঘটনা ঘটেছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা সোসাইটিনিউজকে বলেছেন, “তারা ছাত্রলীগকে একটি স্বাধীন ছাত্র সংগঠন হিসেবে দেখতে চান। যারা পরিশ্রম করেন তাদেরকেই নেতা বানানো হোক এটাই চান সবাই। কার ভাগ্নে,কার ভাই এসব দেখে যেনো কমিটি দেয়া না হয় সেই দাবি করেন নেতারা।”