শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানিয়ে ‘সচেতন নতুন প্রজন্ম’ গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সন্তানরা।
বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা বুদ্ধজীবীদের সন্তানরা স্মরণ করেন তাদের পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের কথা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর বলেন, “খুব বেশি লেখা বই নেই যেখানে আমাদের ছোটরা নিহত বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানতে পারবে। শুধু ফেসবুকিং করে ভাল মানুষ হওয়া যায় না।”
“যারা এদেশ এনে দিয়েছে, তাদের সম্পর্কে না জানলে, কী করে এরা জাতির হাল ধরবে?” প্রশ্ন তার।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগের গল্প কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে বলে দুঃখ প্রকাশ করে আসিফ মুনীর নবীনদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে পারিবারিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার উপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “আজ প্রশ্ন জাগে তাদের সৃষ্টিকর্ম আমরা ধারণ করতে পারছি কি না? মাঝে মাঝে ক্ষোভ হয় শুধুমাত্র শহীদ সন্তানেরা কেন এসব কথা বলবে। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, কাহিনী বিভিন্নভাবে নিয়ে আসতে হবে। সেই সময়ের যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস বলুন।”
আরেক শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. হালিম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী নতুন প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে আরও বহু পথ হাঁটতে হবে বলে অভিমত দেন।
“আমরা দেখতে পাচ্ছি কী করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মনে সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এত দিনের যে জঞ্জাল, তা পাঠ্যসূচি থেকে সরিয়ে, মানুষের মগজ থেকে সরিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আনবার পথে আমরা সবে হাঁটা শুরু করেছি।”
কথা হলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা স্কুল- কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে।
মোহাম্মদপুর সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজের প্রভাষক মাহমুদা বেগম বলেন, “ঢাকার মধ্যে পাকিস্তানিদের ‘কসাইখানা’ হিসেবে কুখ্যাত ছিল আমাদের কলেজ। তাই ইতিহাস ধরে রাখার দায়বদ্ধতা থেকে এবং কী করে বাঙালি জাতির উপর হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দেওয়া, বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই ওদের এখানে নিয়ে আসা।
“আমাদের উদ্দেশ্য এই দিনের মাহাত্ম্য ছাত্রীদের বুঝিয়ে দেওয়া,” বলেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ।
ঢাকা স্টেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমানের মতে বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে এখনও নতুন প্রজন্ম অন্ধকারে আছে।
“আমরা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি, এরপর আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে ১৪ ডিসেম্বর সম্পর্কে আলোচনা করব। কেন বুদ্ধিজীবীরা আত্মত্যাগ করল, কেন এই ঘটনা ঘটল, এগুলোই শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করব।”
দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া রহমান বলে, “এ দিবসে যত সায়েন্টিস্ট আর ডাক্তার আছে সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ফুল দিতে এসেছি।”
মোহাম্মদপুর সরকারী মহিলা কলেজের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বলে, “আমি বুদ্ধিজীবীদের সম্মান জানাতে এখানে এসেছি। ভাল মতো পড়াশোনা করে আমাদের দেশের জন্য নিজেদের আত্মত্যাগ করা উচিৎ।”