অর্থছাড়ে বিলম্বের কারণে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ ছাড়ের বিলম্বের কারণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে জাতীয় উন্নয়ন। সম্প্রতি জাপানভিত্তিক বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা সরকারকে এক চিঠি দেয়। চিঠিতে অর্থছাড় সংক্রান্ত বিলম্বে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রাপ্ত বিদেশি সহায়তা দ্রুত ছাড় করাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে দ্রুত অর্থ ছাড় সংক্রান্ত এক নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে জাইকা বলেছে, তাদের অর্থ বিশেষ হিসাব থেকে গ্রাহকের নিকট স্থানান্তরে বিলম্ব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংস্থাটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে- একটি একক পেমেন্ট স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত সময় অতিবাহিত হয়। এ ধরনের অযথা বিলম্বের কারণে জাইকার প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। আর এ বিলম্বকেই বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম বাধা হিসেবে দেখছে জাইকা। তাই বিলম্বের হাত থেকে রক্ষার জন্য অর্থ বিভাগকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে বলেছে বহুজাতিক এ উন্নয়ন সংস্থাটি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে- কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গতিতেই অর্থ স্থানান্তরিত হয়। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়।

জাইকার বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র রিপ্রেজেনটেটিভ টাকু ইয়াম্বে স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- তাদের অধিকাংশ প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, এ ধরনের বিলম্ব অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে।

গত জুন মাসে এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই তারা অর্থ স্তানান্তরে গতি আনার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতাকেও দায়ী করা হয়েছে ওই চিঠিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, জাইকার লোন কৃষি ঋণ ও এসএমই বিভাগের মাধ্যমে ছাড় হয়ে থাকে। কৃষি ঋণের স্থানান্তর প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এসএমইর বিষয়টি তার জানা নেই।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জাইকার লোনের অধিকাংশই স্থানান্তর হয় এসএমই বিভাগের মাধ্যমে।

জানা গেছে- কোনো প্রকল্পে জাইয়া অর্থায়ন করলে তা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে জাইকার অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ওই প্রকল্পের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকে বাংলাদেশের অন্য কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে তাদের নিজস্ব কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ওই প্রকল্পের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করে। তারপর প্রকল্পের কাজ করার জন্য অর্থ তুলতে পারে প্রকল্প পরিচালকরা।

চিঠিতে টাকু ইয়াম্বে উল্লেখ করেছেন, এ রকম অনেক পরিচালক অভিযোগ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সময়মতো অর্থ পান না তারা। তাই তাদের কাজ স্বাভাবিক গতিতে এগোয় না। ফলে প্রকল্পে খরচ বেড়ে যায়। মানও ঠিক রাখা যায় না।

জাইকা বলছে- বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে অর্থ স্থানান্তর করছে তাতে করে জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গতানুগতিক প্রদ্ধতির বাইরে গিয়ে দ্রুত অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থাগ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছে বহুজাতিক এ সংস্থাটি। তা না হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পের গতি স্থবির হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ অবস্থায় জাইকা আরও বলছে, অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেসব আইনি জটিলতা আছে তা সহজ করা হোক। কারণ এর আগে গত অক্টোবরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়েছিল। সে বৈঠকে জাইকার ৩৭তম লোন দ্রুত ছাড়ের ক্ষেত্রে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দ্রুত অর্থ ছাড় করা গেলে জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প যেসব সমস্যার মধ্যে পড়ছে তা আর থাকবে না।

উল্লেখ্য, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে ৬০০ মেগাওয়াট করে দুটি কেন্দ্রের মাধ্যমে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে জাইকা দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে জাইকার অর্থায়নে রাজধানী ঢাকায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল রুট-৬ প্রকল্পে জাইকা সহায়তা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও অর্থ দিচ্ছে সংস্থাটি।

LEAVE A REPLY