নতুন বই ছাপানোর খরচের সমীকরণ কষতে ব্যর্থ হওয়ায় দরপত্রের চেয়ে সরকারকে ১৯৬ টাকার বাজেট কম দিয়েছিলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ কারণে বর্তমানে ঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিনামূলের বই ছাপানো নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট।
সূত্রে জানা গেছে, এনসিটিবি’র কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে বিপদে পড়েছেন ঠিকাদাররা। এতোদিন ছাপাখানায় বই ছাপিয়ে সরবরাহ করছিলো ঠিকাদাররা। বর্তমানে টাকা না পাওয়ায় বই ছাপা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে ঠিকাদার ও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের মধ্যে। ফলে আগামী ১ জানুয়ারি বই উৎসবের আনন্দ থেকে অনেক শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এসব শঙ্কাকে পাত্তা দিচ্ছেন না এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবির ভুলের কারণে ১৯৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যে কারণে এনসিটিবি ঠিকাদারদের টাকা দিতে পারছে না। পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারদের অনেকে ব্যাংক ঋণ আবার কেউ ধারদেনা এবং নিজস্ব মূলধন দিয়ে বই ছাপার কাজ শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে বই সরবরাহ করেন এনসিটিবি রানিং বিল দেয়। এভাবেই বই ছাপিয়ে সরবরাহ করেন। এখন ঠিকাদারদের টাকা না দেয়ায় তারা অর্থ সংকটে পড়েছেন। অনেকে বই ছাপা বন্ধ করে টাকার জন্য এনসিটিবিতে ধরনা দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এনসিটিবি বই ছাপার টেন্ডার দিয়েছে। টাকা তাদেরই দিতে হবে। ব্যাংকে তাদের কোটি কোটি টাকার এফডিআর আছে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান আমাদের টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেও কোন লাভ হয়নি।
তিনি বলেন, আগে এ রকম সংকটে এফডিআর ভেঙে ঠিকাদারদের টাকা দেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রীকে জানবো। সমাধান না হলে আমরা আইনানুুগ ব্যবস্থা নিবো।
জানা গেছে, ভারতে ছাপা প্রাথমিকের এক কোটিরও বেশি বই এবং চীনে ছাপানো শিক্ষক নির্দেশিকা গাইড একটিও এখন পর্যন্ত দেশে পৌঁছায়নি। শুক্রবার মাধ্যমিকের শতভাগ বই সরবরাহের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও এনসিটিবি ঠিকাদারদের অর্থ ছাড় না দেয়ায় প্রায় ২ কোটি বই ছাপা আটকে গেছে।
গত ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মধ্যে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের (ট্রেড বই) ৯ লাখ ২১ হাজার ১১০টি বই সরবরাহের টার্গেড থাকলেও তাও পূর্ণ হয়নি। ইবতেদায়ী ও দাখিলের ২০ শতাংশ বই ছাপা বাকি রয়েছে। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মাতৃভাষায় ছাপানো ২৪ হাজার ৬৪১ জন শিশুর জন্য ৫১ হাজার ৭৮২টি বই গত ৫ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়।
কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। এ হিসেবে বাকি দিনের মধ্যে বই ছাপা শেষ করে উপজেলা পর্যায় পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শিশুদের পাঠদানের জন্য ২৫ হাজার ৫ শ টিসিং ম্যাটারিয়াল (ফ্লি চার্ট, ফ্লাশ কার্ড, স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্চনবর্ণ চার্ট) একই সঙ্গে টেন্ডার দেয়ায় এগুলোও নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ফলে শতভাগ বই দিয়ে আগামী ১ জানুয়ারি ‘ বই উৎসব’ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এসব সংকটের সমাধান দিলেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, মুদ্রণ শিল্প সমিতির অভিযোগ সত্য নয়। তারা বই ছাপা শেষ করে এখনও বিলই জমা দেয়নি। ঠিকাদাররা বই সরবরাহ করে বিল জমা দিলে টাকা দেয়া হবে। গত সপ্তাহেও ১২২ কোটি টাকা ঠিকাদারদের দেয়া হয়েছে। আমাদের বাজেটের সব টাকা জানুয়ারির মধ্যে চলে আসবে এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।