চট্টগ্রামের অনন্য সঙ্গীত সাধক গফুর হালীর মহাপ্রয়াণ

চট্টগ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশের সঙ্গীতের অঘোষিত তীর্থস্থান। দেশ স্বাধীনের অনেক আগে থেকে এখন পর্যন্ত অনেক গুণী সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ উপহার দিয়েছে চট্টগ্রাম। তেমনই এক অনন্য সঙ্গীত সাধক গফুর হালী।

রমেশ শীলের পরে চট্টগ্রামের সঙ্গীত সাধক গফুর হালী’র জনপ্রিয়তা দেশজুড়ে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার গানে তিনি মিশ্রণ করেছিলেন নানা ধরণের লোকসুর। শুধু আঞ্চলিক গান নয়, তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের লোকগানকে। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দিওয়ানা’, ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’ , ‘মনেরও বাগানে ফুটিলো ফুল গো’ , ‘দেখে যা রে মাইজভাণ্ডারী’ , ‘ও বানু, বানু রে… আই যাইয়ুম রেঙ্গুন শহরত’ , ‘মাইজভাণ্ডারে কি ধন আছে’ , ‘শঙ্খ নদীর মাঝি’ , ‘আল্লাহর ফকির মরে যদি’ উল্লেখযোগ্য। এ রকম আরো অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে গফুর হালী’র।

কিংবদন্তী এই সঙ্গীত সাধক জন্মেছিলেন ১৯২৯ সালের ৬ আগস্ট। তার জন্মস্থান পটিয়া এলাকার রশিদাবাদ গ্রাম । বাবার নাম আবদুস সোবহান। মায়ের নাম গুলতাজ খাতুন। রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাঠ শুরু করেন গফুর হালী। পরবর্তীতে তিনি পড়েন জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে।

আজ ২১ ডিসেম্বর তিনি পৃথিবী ছেড়ে গেছেন । সৃষ্টিকর্তার ডাকে প্রত্যেককেই ছেড়ে যেতে হয় দুনিয়া। থেকে যায়, কর্মের মহিমা। গফুর হালী’র গানের আলোয় পরিস্ফুটিত বাংলার লোকগান। তার গান লেখার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংগীতপ্রিয় মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়।

এক সময় চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে আঞ্চলিক গানের রাজাখ্যাত শিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব এর দোকান ছিল। এখানেই আড্ডা দিতেন সে সময়ের সঙ্গীতপ্রিয় অনেকেই। সেখানে নিয়মিত আড্ডা দিতেন গফুর হালী। শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের গান লেখা দিয়ে গীতিকার হিসেবে খ্যাতি আসে গফুর হালী’র ক্যারিয়ারে। তারপর খ্যাতি ছড়াতে শুরু করে গীতিকার গফুর হালী’র। চট্টগ্রামের অন্য শিল্পীরাও তখন গফুর হালী’র স্মরণাপন্ন হতে শুরু করেন। এভাবেই তিনি একের পর এক জনপ্রিয় গানের জন্ম দিয়ে যান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ছাড়াও শেফালী ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, উমা খান, আব্দুল মান্নান রানা, বেবী নাজনীন, সন্দীপন , শিরিন , সেলিম নিজামী, শিমুল শীল, কল্পনা লালা থেকে শুরু করে দেশের আরো অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর কণ্ঠে উঠে এসেছে গফুর হালী’র গান।

২০০৪ সালে জার্মান গবেষক অধ্যাপক হানস হারডার গফুর হালীকে নিয়ে লিখেন “ডার ফেরুকটে গফুর, স্প্রিখট” গ্রন্থ। অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপনে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন গফুর হালী। আহারে ছিলেন পরিমিত। জীবনের ৮৮ বছর জুড়েই বর্ষীয়ান এই সঙ্গীতসাধক আড়ম্বরে মেতে ওঠেননি কখনো। সঙ্গীত সাধনাই ছিলো তার ধ্যান-জ্ঞান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সঙ্গীত সাধনায় ব্রত ছিলেন।

LEAVE A REPLY