কৃষি ডেস্ক: নীলফামারীর লক্ষ্মীচাপের শীতকালীন আগাম সবজি চাহিদা মেটাচ্ছে নীলফামারীর মানুষদের। আর সবজি চাষে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন জসিম উদ্দিন। তার অনুপ্রেরণায় সবজি চাষ করেছেন স্থানীয়রা। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি ইউনিয়নের সবজি চাষীরা।
সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুড়ি গ্রামে চার একর জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন আগাম সবজি। প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে ইতোমধ্যে খরচের টাকা উঠানোর কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন জসিম। খরচ বাদ দিয়ে দু’ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। দুবাছুড়ি গ্রাম ছাড়াও টুপামারী ইউনিয়নের শিমুলতলীতে চাষ করেছেন শীম।
সবজির ওপর ভর করেই পরিবারে পাঁচজনের সংসার চালাচ্ছেন চাষী জসিম। তার অনুপ্রেরণায় সবজি চাষ করেছেন আইয়ুব আলী, বাচ্চু মিয়াসহ অনেকে। তারাও আগামী শীতকালীন সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে লাউ, মটরশুটি, মিষ্টি কুমড়া, শীম, বেগুনে ভরপুর লক্ষ্মীচাপের বিভিন্ন এলাকা। দুই একর থেকে শুরু করে পাঁচ একর জমিতে চাষ করেছেন আগাম সবজী।
চাষী আইয়ুব আলী জানান, গত বছর জসিম ভাই এখানে এসে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা শুরু করেন। আমাকেও উৎসাহ যোগান। আমিও তার দেখে এবার চার বিঘা জমিতে লাউ চাষ করি। শীতের শুরু থেকে বাজারে এ পর্যন্ত কয়েক দফায় ৭০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি।
তারমত আরেক চাষী বাচ্চু মিয়াও চাষ করেছেন লাউ। দুই বিঘায় তিনিও করেছেন। গতবারের বাশেঁর জাঙ্গি রেখে সেখানেই লাউ করেছেন এবার। তবে গাছ মরে যাওয়ায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, লাভ বেশি না হলেও ক্ষতি হবে না। জসিম উদ্দিনের অনুপ্রেরণায় এলাকায় সবজী বিপ্লব ঘটছে বলে জানান বাচ্চু মিয়া।
স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীচাপ সবজি চাষে উপযোগী। এখানকার সবজি নীলফামারীসহ ঢাকায় যায়। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় রিকসা, ভ্যান, সাইকেল আর ট্রাক পিকআপে করে।
কলেজ পড়ুয়া রাহাত হোসেন বলেন, জসিম ভাই, যে পরিশ্রম করেন, সে অনুপাতে তিনি লাভ করেন না। তিনি নিজেই শ্রম দেন। নিজেই আবার বাজারে সবজী নিয়ে ব্যাচেন। কিছু লোক তার ক্ষেতে কাজ করে দিন চালান।
সবজী চাষী জসিম উদ্দিন জানান, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে চার বছর আগে নীলফামারীতে আসি। তখন থেকে জমি বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করে আসছি। লাভ তেমন হচ্ছিলো না। ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলনের কবলে পড়ে পুঁজি সব শেষ হয়ে যায়।
আশা করছি এবার প্রায় দু’লাখ টাকা লাভ হবে। তিনি জানান, চার একর জমি বর্গা নিয়ে সবজী চাষ করেছি। যশোর ও রাজশাহীতে দু’ ছেলে পড়াশোনা করছে। বাড়িতে স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছিই ভালোভাবে। তবে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ পেলে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
সবজি বাগানে ১৫ জন নারী ও পুরুষ দৈনিক হাজিরায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নারী শ্রমিক মজিদা বেগম জানান, দৈনিক ১৩০-১৪০ টাকা হাজিরা পাই। শিম গাছ পরিচর্যা করা থেকে শুরু করে শিম ছিড়ে বস্তায় ভরি। এখান থেকে বিভিন্ন বাজারে যায় শিম।
ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদীন হিরু জানান, লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন সবজী চাষের জন্য সমৃদ্ধ। চাষীরা আগাম জাতের সবজি চাষ করে লাভবান হয়ে থাকেন। মাঠ পর্যায়ে আমরা প্রত্যেক চাষীকে সহযোগীতা দিয়ে থাকি। তিনি জানান, জসিম উদ্দিন সবজি চাষে এলাকায় সুপরিচিতি পেয়েছেন। তার চাষাবাদ দেখে অনেকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, নীলফামারীর সবজি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। সবজি চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি আমরা। লক্ষ্মীচাপে চাষীরা এবার ভালো ফলন পেয়েছেন সবজিতে।
চলতি মৌসুমে সদরে ১ হাজার একরে সবজি চাষ হয়েছে বলে জানান তিনি।