বসন্তের ফুল শিমূল

Lifestyle:
কোন কোন ফুল আবার ঋতুর কড়া কড়ি পালা বদলের নিয়ম মানতে নারাজ৷ কোন কোন গাছ গ্রীষ্মে ফুল ফোটাতে ফোটাতে তা চলে যায় বর্ষায়ও৷ কাঁঠালিচাঁপা দেহজুড়ে তখন দেখা দেয় পাকা কাঁঠালের গন্ধবাহী সবুজাভ সাদা ফুল৷ জুঁই গাছের ডালে ডালে ফোটে ওঠে সাদা সুগন্ধি এক একটি ফুল৷ ঝুমকালতা আর মধুমালতির লতায় দোলে নানা রকম ফুল৷

কামিনীর সারা দেহ জুড়ে থোকায় থোকায় ফোটে ওঠে সাদা ফুল৷ বাতাসের মৃদু অন্দোলনে সে ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে৷ চাঁপার ডালে ডালে পাতার গোড়ায় ফোটে থাকে হলুদ, সোনালী কিংবা সাদা ফুল৷ করবীর মৌসুমও আসে তখন৷ বড় বড় থোকায় ধরে রক্ত, শ্বেত বা পদ্মকরবী ফুল৷ জহুরি চাঁপা কিংবা বেলী ফুলের বুক জুড়ে তখন আমোদে গন্ধ৷ হাস্নাহেনার ডালের আগায় থোকায় থোকায় ফোটে থাকে সাদাটে নলাকার ফুল৷ বসন্তে শুরু হয়ে গ্রীষ্মের খর তাপে হলুদ কমলা রঙের সুগন্ধিময় থোকা থোকা ফুলে ভরে ওঠে অশোকের ডাল৷ বসন্তে শুরু হয়ে কোন কোন ফুল গাছ আবার ফুল ফুটিয়ে চলে বর্ষা অবধি৷ সাদা পাপড়ির নাগেশ্বর ফুলের বুকে তখন সুগন্ধির প্রবল প্রতাপ৷

কোন কোন ফুল আবার থোড়াই কেয়ার করে ঋতুর বিভেদ৷ সংবেদনশীলতার বেড়াজালে নিজেকে আটকে রাখতে এরা রাজি নয়৷ প্রকৃতির মান অভিমানের খেলায় মগ্ন হতে এদের আকাংখা বড় বেশি নেই৷ আপন মনে ফুল ফুটিয়ে চলে কোন কোন গাছ প্রায় সারা বছর ধরেই৷ চার পাঁচ রকমের জবা ফুল রয়েছে আমাদের দেশে৷ প্রায় সারা বছর ধরেই এক একটি ফুল ধরতে থাকে এদের পাতার কক্ষে৷ এ রকমই আরো ফুল হলো নয়ন তারা, সন্ধ্যামণি বা কৃষ্ণকলি৷ গুল্ম জাতীয় রঙ্গনেরও লাল, হলুদ, সাদা কিংবা লালচে কমলা ফুল ফোটে প্রায় সারা বছর ধরেই৷ কোন কোন ফুল গাছ আবার বড় বেশী শীতকাতর যেন৷ কেবল শীত ছাড়া টগর আর অপরাজিতা ফোটে থাকে বছরের দশ মাসই৷ গ্রীষ্মের দাবদাহ পছন্দ নয় গন্ধরাজের৷ তাই বর্ষা থেকে বসন্ত এই পাঁচটি ঋতুতেই দেখা মেলে এ ফুলের৷ মাধুরী লতায় আবার ফুল ফোটতে দেখা যায় হেমন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত৷ কোন কোন বাগান বিলাসের ফুল ফোটে শীত বসন্তে, তবে এমন জাতও রয়েছে এরা ফুল ফুটিয়ে যায় প্রায় সারা বছরই৷ শরত্‍ থেকে বসন্ত পর্যন্ত বড় বড় থোকায় ফোটে হালকা বেগুনি লতা পারুলের ফুল৷ এমনকি গ্রীষ্ম বর্ষায়ও এদের দেখা মেলে প্রায়শই৷ কলাবতীর ফুল ফোটে বছরে কয়েক বার৷ জাত ভেদে লম্বা ডাটায় এদের ফোটে থাকে থোকা থোকা হলুদ, কমলা, লাল নানা রকম ফুল৷ সারা বছরই কয়েকবার ফুল ফোটে রাঁধাচূড়ারও৷ একটি জাতের ফুল লাল – কমলা তো অন্যটিতে আবার ফোটে হলুদ ফুল৷

এটি বড় আনন্দের বিষয় যে, প্রায় সব ঋতুতেই এদেশে ফোটে কোন না কোন গাছের ফুল৷ পরিকল্পনা মাফিক কোন বাগানে সঠিক ফুল গাছ রোপন করে সারা বছরই পাওয়া সম্ভব কোন না কোন ফুল৷ বাগানে ফুল গাছের চারা রোপনের আগেই বিবেচনায় নিতে হয় কোন উচ্চতার গাছ কোথায় লাগানো হবে৷ তাছাড়া পছন্দ অনুযায়ী প্রজাতি বাছাইয়ের পাশাপাশি জাত বাছাইয়ের বিষয়টিতো রয়েছেই৷ তাছাড়া মরসুমি ফুলের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নকশা অনুযায়ী গাছের উচ্চতার প্রসঙ্গটির পাশাপাশি কোন বর্ণের ফুল তৈরি করে সেসব জাত সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷

ফুলের প্রতি আকর্ষণ মানে মানুষের এক অন্তর্গত তাগিদের এটি বহিঃপ্রকাশ৷ মানুষের নান্দনিক চাহিদা পূরণের এক অতি সুন্দর উপকরণ হলো ফুল৷ ফুলের বাগান স্থাপন, গৃহের এক কোণে ফুল গাছ রোপন, গৃহের টবে বা ঝুলন্ত মাটির পাত্রে ফুলের গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারি৷ আমাদের জীবন বড় একঘেয়েমিতে ভরা৷ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ক্লান্তি দূর করবো সে অর্থ ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা আমাদের অতি নগণ্য৷ নাগরিক জীবনের নানা রকম টানাপোড়েন অনেক সময় আমাদের কর্মস্পৃহাকে শ্লথ করে দেয়৷ একটি দু’টি ফুল গাছ, একটি দু’টি ফুলের টব কিংবা শিকেয় ঝুলানো একটি দু’টো ছোট ছোট ফুল গাছ শোভিত মাটির পাত্রে চোখ রেখে যে আনন্দময় অনুভূতির প্রকাশ মনে জেগে উঠে তাই মানুষকে এগুবার সঞ্জীবনী সুধার মত কাজ করে৷ নিজের হাতে একটি ফুলের চারা লাগিয়ে যত্ন নিন দেখবেন গাছে কি রকম ফুল ধরবে সেটি দেখার আকাংখায় আপনার দিনগুলো কি সুন্দর কেটে যায়৷

LEAVE A REPLY