প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাজস্ব আদায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের গতি ও শিল্প খাতের উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ছয় মাসের পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায় গত অর্থবছরের চেয়ে এ বছর ভালো যাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওই ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবার বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা কাটিয়ে ভালো অবস্থায় আসবে। বাংলাদেশের অবস্থাও ভালো যাবে।
চলতি অর্থবছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছর চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এবার বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শিল্প খাতে উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের গতি বেড়েছে। জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ এ বছর ৩১ শতাংশে উন্নীত হবে। এডিপি বাস্তবায়ন সন্তোষজনক। সব মিলিয়ে এবার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক সব সময় অত্যন্ত রক্ষণশীল পূর্বাভাস দেয়। এই প্রথম কোনো দেশ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিতভাবে প্রাক্কলন করল। আমরা তাদের ধন্যবাদ দিই। ৬ দশমিক ৮ বলা মানে হলো অসাধারণ সফলতা। আমি জানি না তারা এবার কীভাবে এতটা সদয় হলো।’

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জিডিপির হিসাব করার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স আওতায় আসে না। এটি মোট জাতীয় আয় বা জিএনআই হিসাবের ক্ষেত্রে আওতায় আসে। তবে প্রকৃতপক্ষে দেশে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো কমেনি বলে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, অর্থ আসছে। সেটা ব্যাংকিং অথবা বৈধ পথে না এসে হুন্ডির মাধ্যমে আসছে। আবার অনেকে সোনা নিয়ে আসছেন। সেই সোনা ভারতে চলে যাচ্ছে।

বৈধ পথে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, অনেক খাতেই প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা গেলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো উৎসাহিত হবে।

এই অর্থবছরে দেশে ২৭ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে প্রায় ২০ লাখ নতুন মুখ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এবার যে ২৭ লাখ কর্মসংস্থান হবে তার মধ্যে সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ কর্মী বিদেশে যাবে, বাকি কর্মসংস্থান দেশে হবে।

চলতি বছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা একাডেমিকে শক্তিশালী করা হবে বলে উল্লেখ করেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সরকারি ব্যয় যথাযথভাবে না হলে সুফল মেলে না। এ জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী আইএমইডি দরকার। বিআইডিএসকে শক্তিশালী করার আইন শিগগিরই সংসদে উঠবে বলে জানান তিনি।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY