রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের সর্বোচ্চ দুই পদ বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপচার্যের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে ১৯ মার্চ রবিবার। রাবির পরবর্তী উপাচার্য-উপউপাচার্য কে হচ্ছেন- বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) সিনেট মনোনীত তিনজনের একটি প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বিগত দুই দশক ধরে সরকারদলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ দেখেই উপাচার্য ও উপউপাচার্য নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকারগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সময়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তার সুপারিশ আচার্যের কাছে প্রেরণ করেন। সেই সুপারিশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ দেন আচার্য।আর রাবির ক্ষেত্রে রাজশাহী আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশও বড় ভূমিকা রাখে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ দুই পদে আসার জন্য সরকার দলীয় সমর্থক একাধিক শিক্ষক শুরু করেছেন চেষ্টা-তদবীর। তবে বর্তমান প্রশাসনের বাইরে উপাচার্য বা উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনার প্রথমেই রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. মো. আবুল কাশেম। উপচার্যের পদে আসার জন্য তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের বর্তমান সভাপতি ড. সেলিনা পারভীনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সূত্রগুলো। দায়িত্বে আসলে তিনিই হবেন রাবির প্রথম নারী উপাচার্য বা উপউপাচার্য।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আরেক অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আনন্দ কুমার সাহাও আসতে পারেন পরবর্তী প্রশাসনের দায়িত্বে। তিনিও রাবিতে বেশ কয়েকটি সম্মানজনক পদে আসীন ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রকীব আহমেদও প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদটি পেতে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগে পিছিয়ে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন। তিনি বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আখতার ফারুকও বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন প্রশাসনের দায়িত্ব পেতে। এর আগে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের আরেক অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারও চেষ্টা করছেন প্রশাসনের দায়িত্ব পেতে। এর আগে তিনি ২০০৯-১৩ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক আহমেদও পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রশাসনে তিনি ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স’ সেলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আলোচিত এসব শিক্ষকদের কয়েকজন উপাচার্য হিসেবে না হলেও উপ-উপচার্যের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান প্রশাসনকে আবার দুই-এক বছরের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বা তাদেরকে পুনরায় দায়িত্বে বহাল করাও হতে পারে।
তবে রাবি শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করছেন, যারা শিক্ষার্থীবান্ধব হবেন, শিক্ষা ও গবেষণায় মান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা থাকবে এবং নিয়োগ ও শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করবেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন তারাই হোক রাবির উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য।##