জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পুরুষ এবং নারীকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য নারীর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ও সচেতনতা উপর জোর দিতে হবে। এছাড়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পারিবারিক নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া ও সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হলে কিছু বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা ও নারীর অধিকার শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে বক্তরা এসব সুপারিশ করেন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম’ ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যৌথভাবে সংলাপটির আয়োজন করে। সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম। এছাড়া উইমেন চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহমাদ, নারী নেত্রী মালেকা বেগম, উন্নয়ন কর্মী মালেকা খানসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন। সংলাপে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ একটি উপস্থাপনা করেন। এতে তিনি এসডিজি বাস্তবায়ন নারীর অধিকার, দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকী বাল্য বিবাহ বন্ধ ও সচেতনতা বাড়াতে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলেন, সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য সমাজের পুরুষদেরও সঙ্গে রাখতে হবে। সবাইকে সচেতন করতে হবে। নারীর কাঙ্খিত উন্নয়নে অনেক সমস্যার সামনে পড়তে হবে। তারপরও এগিয়ে যেতে হবে।
সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যের উন্নতি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, মেয়েদের স্কুলে পাঠানোসহ সকল অর্জন নারীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে হয়েছে। তবে এত অর্জনের পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক বিষয়ও রয়েছে। যেমন-বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতনসহ কিছু সূচকে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি।
বক্তারা এ সময় বলেন, বাংলাদেশ এমডিজি বাস্তবায়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক ভাবে অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নারী নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে নারীর ঝরে পরার হার রোধ করা এবং ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোতে অনেকে পিছিয়ে আছে দেশ। বহির্বিশ্বে এসব বিষয় নিয়ে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। যদি এসব বিষয়ে সাফল্য অর্জন না করা যায়, তবে অর্থনৈতিক অর্জনগুলো ব্যর্থ হয়ে যাবে।
বক্তারা আরো বলেন, নারীকে পেছনে রেখে এসডিজি বাসত্মবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য সবার আগে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তার জন্য শিক্ষা দরকার। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর এগিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যপক হারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রায়ই উচ্চপদের জন্য নারী কর্মকর্তা চাইলেও পাওয়া যায় না। এসব কাজের জন্য ঘরের বাইরের পরিবেশকে নারীর জন্য নিরাপদ করতে হবে। যানবাহন ও অবকাঠামোগত সুবিধাগুলোও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পায় না। নারীকে এগিয়ে নিতে হলে নীতিশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী পুরুষ সবারই নীতি নৈতিকতা শিক্ষার আসল জায়গা পরিবার। বাইরের শিক্ষা ও আইন দিয়ে সমাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় বলে বক্তারা বলেন।